আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

প্রেম দ্বন্দ্ব | পর্ব - ০৫ | ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প | ভালোবাসার গল্প | Aduri Pakhi - আদুরি পাখি

ভালোবাসার উপন্যাস, ভালোবাসার ধারাবাহিক গল্প, ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প, ভালোবাসার গল্প, রোমান্টিক গল্প, Aduri Pakhi, আদুরি পাখি, Valobasar Golpo,
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
অনেক কষ্টে লস্কর সিং-কে ধরতে পেরেছিল আহাদ। কিন্তু কনস্টেবলদের অবহেলায় কিভাবে যেন সে পালিয়েও গেল। আহাদ তার পিছু ধাওয়া করে তার পায়ে গুলি না ছুঁড়লে কিছুতেই তাকে ধরা সম্ভব হতো না। ধরতে পেরে কয়েকটা লাথি ঘুষি মেরে সবকিছুর পেছনে কার হাত আছে জানতে চাইলে লস্কর সিং হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
- জব্বারের পেটের মেমোরি কার্ডে সব আছে স্যার।
আমারে ছাইড়া দেন। আমি বউ বাচ্চার জন্য সব করছি স্যার।
আহাদ তার গলা চেপে ধরে বলল,
- ওই কেমিক্যালটা তোর কাছ থেকে কারা কিনে নিয়েছিল? তাদের নাম বল। না বললে তোকে এক্ষুণি শেষ করে দেব।
লস্কর সিং ব্যাথায় কোঁকাতে কোঁকাতে নলল
- ওরা আমার বউ বাচ্চাকে মেরে ফেলবে স্যার।
লস্কর সিং আর কিছু বলতে পারেনি। গুলি খাওয়ায় সে চৈতন্য হারিয়েছিলো। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে আহাদ ফাইলপত্র ঘেঁটে দেখলো সেদিন যে লাশটা চুরি হয়েছিলো তার নামই জব্বার। ওর পেটে মেমোরি কার্ড? তারমানে পোস্টমর্টেম এনালিস্টের কাছে সব থাকবে। কিন্তু মেমোরি কার্ডটা রিপোর্ট এটাচ নেই কেন? কোথাও উল্লেখও নেই। ফাইলে এনালিস্টের নামের জায়গায় অনন্যা ইয়াসমিনের নাম দেখে আর কোনোপ্রকার বিলম্ব না করে অনন্যাকে ফোন দিল সে। কিন্তু অনন্যার ফোন সুইচঅফ। নিজের কাজে নিদারুণ ব্যস্ত থাকার দরুন অনার সাথে তার স্বাভাবিক সম্পর্কটা ধসে পড়ার পথে। যদিও যেটুকু পেরেছে সে চেষ্টা করছে অনাকে সময় দিতে। কাউন্সিলর বলেছেন, অনন্যা ইয়াসমিন নিজেও মানসিক অবসাদে ভুগছেন। রাত্রিকালীন সময়ে যে স্বত্বাটা তারমধ্যে বিরাজ করে সেই স্বত্বার সাথে অনন্যার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটা শুধুমাত্রই তার উপেক্ষার কারণেই নয়। মানসিক অবসাদে ভুগতে থাকা অনন্যা ইয়াসমিন যখন বুঝতে পেরেছে দিনের বেলায় সে আহাদ আলভীর কাছ থেকে কোনোপ্রকার যত্ন পাচ্ছেনা, বরং উপেক্ষিত হচ্ছে, অবহেলার পাত্রী হচ্ছে কিন্তু অপরদিকে সেই আহাদ আলভিই রাতে তাকে বুকে টেনে নিচ্ছে, তাকে ভালোবাসছে তখন রাত্রিকালীন আহাদ আলভিই তার কাছে অতিপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সে যে নামেই হোক, কিংবা যে রূপেই হোক। ফজরের আজানের পরপরই আহাদ জেগে উঠে। প্রতিদিনকার মতো অনন্যা তখন তার বুকে লেপ্টে ঘুমায়। তার এলোমেলো চুল, গায়ের শাড়ি কিংবা কামিজের অবস্থান দেখলেই সে বুঝতে পারে রাতে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সময় কেটেছে। আজও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। গায়ে জড়িয়ে থাকা অবিন্যস্ত সাদা শাড়ি, মুখে লেপ্টে থাকা সাজ, চোখের মোটা কাজল, গলা আর বুকের ভাঁজে কয়েকটা সুচিক্কণ আঁচড়, ঠোঁটের কোণে ছড়িয়ে থাকা লিপস্টিকের দাগ দেখে মৃদু হেসে কয়েকটা বাসি চুমু খেয়ে সরে পড়েছিল আহাদ। ফ্রেশ হয়ে এসে ইউনিফর্ম গায়ে দেয়ার পর বেডসাইডে টেবিলে আধখাওয়া কেকটা দেখে মনে করে তার জন্মদিন পালন করায় অনন্যার প্রতি কৃতজ্ঞতা সাথে আর্ভিনের কথা মনে পড়ায় মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো তার। কেকের টুকরো মুখে পুরে বেরিয়ে আসার সময় রিংটোন বেজে উঠায় ফোনটা কানে দিতেই বিছানায় গড়িমসি খাওয়া অনন্যার অর্ধনগ্ন শরীরটা দেখে সে থমকে গিয়েছিলো। কাছে গিয়ে তাকে ঢেকে দিয়ে চলে আসার সময় অনন্যা তার গলা ঝাপটে জড়িয়ে ধরে বিছানায় ফেলে দিল। ঘুম তখনও পুরোপুরি ছুটেনি তার চোখ থেকে। নগ্ন গলার মাঝে মুখটা গুঁজে দিয়ে অজস্র চুমু দিতেই অনন্যার মুখে কুঁইকুঁই শব্দ শুনে হেসে উঠলো আহাদ।
আরও কয়েকটা মিষ্টিমধুর মুহূর্ত পাগলাটে স্ত্রীর সান্নিধ্যে কাটালো সে। ঘুমঘুম চোখে সারামুখে তার প্রলম্বিত ভেজা চুম্বনে শিহরিত হচ্ছিলো অনন্যা। তারপর ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠলো। ফোনের অপর পাশ হতে জুনিয়র অফিসার জানালো লস্কর সিং'এর খোঁজ পেয়েছে তারা। আর একমুহূর্তও দেরী না করে বেরিয়ে এসেছিলো আহাদ। রিংটোনের শব্দ শোনামাত্রই অনন্যা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো রাগে। আহাদ দেখেও বেরিয়ে এসেছিলো। তার কিছু করার ছিল না।

অস্থির হয়ে পায়চারি করতে করতে জিহাকে ফোন দিল সে। জিহা ফোন রিসিভ করে জানালো, ভাবি এখনো হসপিটাল থেকে আসেনি। সে নিজেও ভাবিকে ফোনে পাচ্ছেনা। এমনটা আগে কখনো হয়নি। আহাদ সাজিদকে বলে গাড়ি নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো। কিন্তু সেখানে অনন্যার সিনিয়র ডাক্তার জানালেন অনন্যা আধঘন্টা আগে বেরিয়ে পড়েছেন। উনার শরীর খারাপ লাগছিলো বলছিলেন।
আহাদ চিন্তিত হয়ে পড়লো। গাড়িও নেই। গাড়ি নিয়ে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল অনন্যা। আহাদ বাড়ির দিকে রওনা দিল আগাপাশতলা না ভেবে। ফেরার পথে সারারাস্তা সে চোখ বুলিয়েছে। কোথাও গাড়ি নেই। বাড়ি ফিরেও দেখলো অনন্যা এখনো ফেরেনি। আমেনা বেগম বললেন,
- হাসপাতালে যাওয়ার সময় মুখটা ভার করে রেখেছিলো। তুই কাজে এতটাই ব্যস্ত হয়ে গেছিস যে মেয়েটার দিকে নজর দিসনা। তোর জন্য ও কত কি করে তোর জানা আছে? ও না থাকলে এতদিন মরে যেতি।
আহাদ কর্কশ গলায় বলল,
- আমি বসে আছি মা? ইচ্ছে করে করছি এসব দৌড়াদৌড়ি? আমি কিসের জন্য লড়ছি তুমি জানো না? নাকি জেনেও কথা শোনাতে ইচ্ছে করছে? অনা এত কাণ্ডজ্ঞানহীন কি করে হতে পারে? ওর মাথায় রাখা উচিত সবাই ওর জন্য চিন্তা করবে।
জাকিয়া বেগম বললেন,
- ওর বাড়িতে তো যেতে পারে। কেউ না থাকুক। ওদের বাড়ির কেয়ারটেকারটা থাকে ওখানে।
আহাদ বলল,
- সেখানে গিয়ে দেখতে হবে। আমি বেরোচ্ছি।
আমেনা বেগম বললেন,
- সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরিস।
আহাদ বলল,
- ওকে না পেলে ফিরবো না।
আমেনা বেগম আঁতকে উঠলেন। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকলেন শুকনো মুখে। জিহা বলল,
- ভাবিকে যদি খুঁজে না পায় তখন কি হবে জেম্মা?
আমেনা বেগম স্থির চেয়ে রইলেন আহাদের গাড়িটার দিকে।
অনন্যাকে ওদের বাড়িতেও না পেয়ে এবার ভীষণ দুশ্চিন্তায় পড়ে গেল আহাদ। আছরের আজান পড়ে গেছে চারিদিকে। আজানের পর থেকে ওর শরীরের মধ্যে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। ঝিমুনি ঝিমুনি ভাবটা প্রখর হয়, হাত পায়ের রগ ম্যাঁজম্যাঁজ করতে থাকে, অকারণে মেজাজ খারাপ লাগে। আঁধার নামলে আর কোনো পথ থাকেনা তার সামনে। তখন নিজেকে ভিন্ন জগতের মানুষ হিসেবে মনে হয়। রাস্তার ধারে একটা বেঞ্চিতে ক্লান্ত হয়ে বসে রইলো সে।
আপাদমস্তক ভাবতে গিয়ে হঠাৎ মনে হলো অনা অপহরণ হয়নি তো? হসপিটালের আউটডোর সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে সবটা ক্লিয়ার হতে পারে। যদি ওই মেমোরি কার্ডটা অনা পেয়েও থাকে তাহলে তো তার বিপদ। তার অনুমানটাই সত্যি হয়ে দাঁড়ালো। সিসিটিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেল অনন্যা উঠার পর গাড়িতে পরপর তিনজন শাড়ি পরিহিত মহিলা উঠে বসেছে। আহাদের বহুদিনের অনুসন্ধান, জানাশোনা, অভিজ্ঞতা তার চোখে স্পষ্ট ধরা দিয়েছে মহিলার পোশাকে পুরুষ ছদ্মবেশীগুলো। সামনে থাকা চেয়ারটাতে জোরেশোরে লাথি বসিয়ে দিয়ে মাথা চেপে ধরে বসে পড়লো সে। সাজিদ কাঁধে হাত রেখে বলল,
- তুই নিশ্চিত অনন্যার কাছে মেমোরি কার্ডটা আছে? তুই দেখেছিস?
আহাদ মাথা তুলে বলল,
- না। ও আমাকে ওই ব্যাপারে কিচ্ছু বলেনি। অনা এটা কি করে পারলো? আমি ওর এতটা পর হয়ে গেলাম যে এতবড় সিক্রেটটা ও আমাকে জানালো না! এখন কোথায় খুঁজবো ওকে? গাড়ির নাম্বার দিয়েছিস?
- হ্যা অলরেডি বেরিয়ে পড়েছে সবাই। তুই এতটা চাপ নিস না। আমি দেখছি সব। আরেকটা কথা।
আহাদ তার দিকে তাকালো। সাজিদ উশখুশ করে বলল,
- আন্টি আমাকে ফোন দিয়েছে। তোর অসুস্থতা..
আহাদ রেগে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বলল,
- আমাকে কি তোর পাগল মনে হয়? আমি পাগল?
এত কষ্ট করে এতদূর এসেছি এখন অনার কারণে সব শেষ। ওর কিছু হলে আমি নিজেকে..
মাথা চেপে ধরে ফের বসে পড়লো সে। কক্ষে একজন কনস্টেবল ঢুকে এল। বলল,
- স্যার এসএসপি স্যার এসছেন।
আহাদ দাঁড়িয়ে পড়লো সোজা হয়ে। এসএসসি স্যার ব্যস্ত গতিতে ঢুকে এসে বলল,
- মিস্টার আলভী এবার আপনার বাড়ি যাওয়া উচিত। আপনার টাইম অলরেডি ওভার। এরপর থেকে আপনার দ্বারা আমাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। ডক্টর অনন্যা ইয়াসমিনের খোঁজ আজকের রাতের মধ্যেই পেয়ে যাব আমরা। সাজিদ প্লিজ মিস্টার আলভীকে নিয়ে যান। আহাদ বলল,
- আমি অনাকে না নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারব না স্যার। ও এমনিতেই অসুস্থ তারমধ্যে ওরা না জানি অনার সাথে কি করে। ওরা আর্ভিনের খুনী, ওরা যা খুশি করতে পারে।
কামরুল হাসান কাঠকাঠ গলায় বললেন,
- আমি জানি সবটা। কিন্তু এখানে আপনার কিছু করার নেই। সাজিদ প্লিজ তাকে নিয়ে যান। বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসুন। কাউন্সিলর অপেক্ষা করছেন উনার জন্য।
আহাদ যেতে চাইলো না। সাজিদ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
- তুই এত হাইপার হচ্ছিস কেন? অনন্যার কিচ্ছু হবেনা দেখিস। আর অপহরণকারীরা তোকে ফোন করতে পারে। ফোন করলে তখন আমাদের জানাস। তোর এখন রেস্ট প্রয়োজন।
আহাদ একটা কথাও বলেনি আর। চুপচাপ গাড়ির কাছাকাছি চলে এল। চারিদিকে মাগরিবের আজান পড়ছে। আহাদ গাড়ির সিটে মাথা এলিয়ে বসে থাকলো। সাজিদ তাকে বাড়ি নিয়ে এসে আমেনা বেগমকে বললো,
- অনন্যাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। এটা আহাদ জানে। ও খুব বেশি হাইপার হয়ে গেলে ওকে আর এটা মনে করিয়ে দেবেন না। জিহা আমি যেটা বলতে চাইছি বুঝতে পেরেছ?
জিহা আহাদের ঘর্মাক্ত মুখটা মুছে দিচ্ছিলো। সাজিদের কথায় মাথা নেড়ে বলল,
- জ্বি। কিন্তু ভাবির কি হবে? আর আর্ভিন ভাইয়া যদি ভাবির খোঁজ করে তখন কি বলব? আসলে রাতে ভাইয়া আমাদের কারো কথা শুনতে চায় না।
সাজিদ বলল,
- কাউন্সিলর আসছেন। চিন্তা নেই।
আমেনা বেগম বললেন,
- কিন্তু অনা? ওর কিছু হলে সব শেষ হয়ে যাবে। ও এখনো এই বাড়িটাকে জিইয়ে রেখেছে। ওকে যে করেই হোক অক্ষত ফিরিয়ে এনো বাবা।
সাজিদ বলল
- আমি কথা দিতে পারছিনা আন্টি। কিন্তু আমাদের টিম অলরেডি কাজে লেগে পড়েছে।
বেরিয়ে পড়ার আগে মেমোরি কার্ডটার কথা জিহার কাছে জানতে চাইলো সাজিদ। এটার জন্য অনন্যাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। জিহা জানালো সে এই ব্যাপারে কিছুই জানেনা। দুইমাস যাবত ভাবির সাথে তার সম্পর্কটাও স্বাভাবিক নেই। সারাদিন কাজে থাকে, কাজ থেকে ফিরে ভাইয়াকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে। জিহা খুশি ছিল এ নিয়ে। আহাদ ভাইয়া যখন নিজেকে মেহযেব আর্ভিন দাবি করে তখন বাড়ির কাউকেই তোয়াক্কা করেনা এমনকি জেম্মাকেও না।
রান্নাঘরে কাটাকুটির সরঞ্জাম থাকে বলে জেম্মা সেদিন ভাইয়াকে ভাবির কাছে যেতে বারণ করেছিল। যেতে না দেয়ায় রেগেমেগে জেম্মাকে এমনভাবে ধাক্কা দিল, সে না থাকলে জেম্মার হাড়গোড় কিছুই অবশিষ্ট থাকতো না। অথচ ভাবির সামনে সে একটা নিষ্পাপ বাচ্চা।
দায়িত্বশীল এসপি আহাদ আলভীর সাথে ডক্টর অনন্যা ইয়াসমিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব, দূরত্ব তাকে কষ্ট দিলেও রাতে তাদের দুজনকে একসাথে বসে হাসতে দেখলে জিহার খুব শান্তি লাগতো। তাদের দুজনের মধ্যেকার বন্ধন দেখে কেউই বলবে না বিয়ের পূর্বে তাদের মধ্যে কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। একজন সুস্থ সবল তুখোড় কৌশলী সাহসী এসপির প্রেমে মুগ্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক হলেও একজন মানসিক বিকারগস্ত মানুষকে ভালোবেসে আগলে রাখতে পারাটা সহজ নয়। আর সেই কঠিন কাজটা করতে গিয়ে নিজের অস্তিত্ব পর্যন্ত সংকটপূর্ণ করে তুলেছে অনন্যা ইয়াসমিন। সেই মানুষটার অনুপস্থিতি কি করে মানবে মেজর আর্ভিনরূপী এসপি আহাদ আলভী?
জিহার সমস্ত উদ্নেগ, ব্যাকুলতা, আতঙ্ককে ছাপিয়ে দিয়ে গোসল সেড়ে নিজের পছন্দের একটা শার্ট গায়ে দিয়ে পারফিউম মেখে একজন সুস্থ মানুষের মতো ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো আর্ভিন। জিহা জিজ্ঞেস করলো,
- কিছু খাবে?
দুপাশে মাথা নেড়ে কিছু খাবেনা বলে আবারও ঘরে চলে গেল সে। জিহার কাজ সারাক্ষণ তাকে নজরে রাখা। সাতটা, আটটা, ন'টা, দশটার ঘরে ঘড়ির কাঁটা পৌঁছাতেই সে ড্রয়িংরুমে নেমে এসে জিহাকে বলল,
- ও এখনো আসেনি কেন?
জিহা এবার ভড়কে গেল। আমতাআমতা করে বলল,
- দেরী হবে বলেছে।
তার কথা বিশ্বাস করলো আর্ভিন। বলল,
- ফোন দে।
জিহা কাঁপা-কাঁপা হাতে ফোন নিল। আমেনা বেগম বলল,
- ও চলে আসবে সময়মত। তুই ঘুমিয়ে পড়।
আমেনা বেগমের দিকে সে এমন কঠিন চোখে তাকালো। তিনি ভড়কে গেলেন। কপালে আঙুল বুলাতে বুলাতে জিহাকে বলল,
- সামান্য কাজটুকুও পারিস না?
জিহা কেঁপে উঠে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো কাউন্সিলর এসেছেন। আহাদ আলভীর পরামর্শক হলেও মেহযেব আর্ভিনের কাছে কাউন্সিলর তার জাতশত্রুর মতো। কাউন্সিলরকে দেখে চেঁচিয়ে উঠে বলল
- তুই আবার এসেছিস এখানে? অনু না থাকলে তোকে খবর পাঠায় কে? কেন এসেছিস এখানে?
বলতে বলতে কাউন্সিলরের দিকে এগিয়ে গেল। জিহা তার পথ আটকে উত্তেজিত হয়ে বলল,
- ভাইয়া, ভাবি ফোন ব্যাক করেছে দেখো। কথা বলো। তার হাত থেকে ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়ার পর কানে ধরে "অনু" বলে ডাকতেই ওপাশ থেকে একজন বলল,
- এসপি আহাদ আলভী সরি সরি মেজর মেহযেব আর্ভিন বলছেন?
আর্ভিন উত্তেজিত হয়ে বলল,
- হ্যা তুই কে?
- আপনার ভাইয়ের স্ত্রী এখন আমাদের কাছে আছে। সরি বউটা তো আপনারও।
বলেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো লোকটা। আর্ভিনের চোয়াল শক্ত আর চোখে রক্ত জমে উঠলো। গর্জন করে বলল,
- একজন কমান্ডো আর্মি অফিসারের সাথে সাবধানে কথা বল। মেরে শালা পুঁতে ফেলবো একদম। সাহস থাকলে সামনে আয় শুয়োরের বাচ্চা।
জিহা বলল,
- ভাইয়া শান্ত হও।
জিহাকে ঠেলে সরিয়ে দিল সে। অপহরণকারীরা মথুয়া সুরঙ্গের কথা জানিয়েছে তাকে, সাথে শুনিয়েছিলো ফোনে অনন্যার চেঁচামেচি। ছেড়ে দাও বলে একনাগাড়ে চেঁচিয়ে কেঁদে যাচ্ছিলো সে। আর্ভিন আরও ছটফটিয়ে উঠেছিল তার কন্ঠস্বরটা শুনে। মথুয়া সুরঙ্গে চলে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে যাচ্ছিলো সে। আনোয়ার মীর্জা আর কাউন্সিলর তাকে আটকে ফেলেছিলো। শক দেয়ার পর শান্ত হয়ে এল সে। কাউন্সিলর টক থেরাপির সাহায্যে তার মধ্যে আহাদ স্বত্বাকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হলো শেষরাত্রে। ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠলে আরও দ্রুত সে আহাদ স্বত্বায় ফিরে আসতে সক্ষম হবে জানিয়ে কাউন্সিলর চলে গেলেন, যাওয়ার সময় এও জানালেন ডক্টর অনন্যা ইয়াসমিন এতদিন যাবত একটা ঔষধও খাওয়ায়নি উনাকে, যার কারণে উনি ঘুমাননি যতটা ঘুমের প্রয়োজন ছিল আর্ভিন স্বত্বার এবং উৎসাহিত করেছেন সেই স্বত্বাকে নিজের মধ্যে জিইয়ে রাখার জন্য। উনি চাননা আর্ভিন স্বত্বা হারিয়ে যাক আহাদ আলভীর মধ্যে থেকে। কারণ উনার মনে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, আর্ভিন স্বত্বাটা হারিয়ে গেলেই আহাদ আলভী পুনরায় তাকে অবহেলা আর উপেক্ষা করে যাবে।

বাথটবে গা ভিজিয়ে বসে থাকার সময় নিজের মধ্যে বিদ্যমান আর্ভিনস্বত্বাকে প্রখরভাবে অনুভব করলো আহাদ। পছন্দের কালো শার্ট, পারফিউমের গন্ধটা তার সুস্থ মস্তিষ্ক সহ্য করতে পারছিল না কিছুতেই। আর্ভিনের পছন্দের শার্ট, আর পারফিউমের গন্ধটা মন ভরিয়ে দিচ্ছিলো। একটা সাদা শার্ট গায়ে দিয়ে, পিস্তলে গুলি ভরে নিয়ে এসএসপি স্যারের বাড়ির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লো সে। মথুয়া সুরঙ্গটা খুঁজে বের করতেই হবে।

মেমোরি কার্ডের কথা অস্বীকার করায় হাত, পা, বেঁধে তারা অনেক মেরেছে অনন্যাকে। তারা এটা সম্পর্কেও বিদিত ছিল যে অনন্যা মানসিক রোগে ভুগছে। তাই তো মেজর মেহযেব আর্ভিনের খুনের দৃশ্যপট পুনরায় তার চোখের সামনে ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো ভয় দেখানোর জন্য, আর সত্যিটা স্বীকার করার জন্য। আর্ভিনের শরীরে পড়া প্রতিটি চাপাতির কোপ, প্রতিটা আর্তচিৎকার, প্রতিটা রক্তের ফোঁটা, তারপর ধীরেধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার দৃশ্য অসহনীয় যন্ত্রনার ছিল অনন্যার কাছে। মেমোরি কার্ডের বাকি ভিডিও গুলো সে দেখলেও খুনের এই দৃশ্যগুলো সে স্কিপ করে গিয়েছিলো। সেই নির্মম হত্যাকান্ড দেখার পর চিৎকার করতে করতে অচৈতন্য বরণ করে নিল সে।

মথুয়া সুরঙ্গের ম্যাপ খুঁজে বের করে পুলিশের দলবল বেরিয়ে পড়লো ভোর নাগাদ। আহাদও রওনা দিচ্ছিলো। পথিমধ্যে জিহা ফোন করে জানালো সে একটা মেমোরি কার্ড পেয়েছে ভাবির হ্যান্ডব্যাগে। আহাদ কাউকে কিচ্ছু না জানিয়ে বাড়ি ফিরে মেমোরি কার্ডটা উদ্ধার করলো। তারপর পেনড্রাইভে ইনসার্ট করে ল্যাপটপে ওপেন করতেই একের পর এক সমস্ত খুনীদের চেহারা তার কাছে স্পষ্ট হয়ে এল।

চলমান.....


আপনাকে অনেক ধন্যবাদ প্রেম দ্বন্দ্ব | পর্ব - ০৫ | ভালোবাসার রোমান্টিক গল্প | ভালোবাসার গল্প | Aduri Pakhi - আদুরি পাখি এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি