আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই ♥ || পর্ব - ০১ || সেরা রোমান্টিক উপন্যাস || ভালোবাসার গল্প | AduriPakhi - আদুরি পাখি

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই 
পর্বঃ- ১

_________
বাহ! আজকাল কি মানুষকে শরীর দেখিয়ে বেড়াতে খুব ভালো লাগে?? 

ইশা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিয়ে বাড়ির কিছু পিচ্চি ছেলে মেয়েদের নাচ দেখছিলো। হঠাৎ পিছন থেকে পরিচিত কণ্ঠে এমন একটা জঘন্য কথা শুনে চমকে তাকালো সে। আর পিছনে তাকাতেই কণ্ঠের মালিককে দেখে রীতিমতো ছোট খাটো একটা স্ট্রোক করলো ইশা। ভয়ে তো ওর জান যায় যায় অবস্থা। এই রাক্ষসটা এখানে কেন  সেটাই বুঝতে পারছেনা ইশা। দেখতে যথেষ্ট সুন্দর হ্যান্ডসাম আর গুড লুকিং হলেও; কেন যে এমন ভিলেনের মতো আচরণ করে সেটাই ইশার বুঝে আসেনা। কই? আর কারো সাথে তো এমন করেনা?? শুধু ওর সাথেই কেন এমন করে?? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ভীতু ইশা সামান্য পরিমাণ সাহস সঞ্চার করে নিলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি ইশাকে চুপ করে থাকতে দেখে তীর্য কণ্ঠে আবারও হুংকার ছাড়লো। 

" কি হলো? কথা বলছিস না কেন?? ব্যাটারির চার্জ কি পুরিয়ে গেছে?? (রেগে) "

ইশা এবার মনে সাহস নিয়ে ভীতু কণ্ঠে বললো---- " ভ ভ ভাইয়া তুই?? তু তুই কবে আসলি??  তু তু তুই তো আসবিনা বলেছিলি। "

" কেন? আমি এসে কি খুব বড় ক্ষতি করেছি?? (রাগী কণ্ঠে) 

" না না; তা হবে কেন?? আমি তো জাস্ট এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম। কারণ তুই তো বলেছিলি তুই আসবিনা তাই বলছিলাম আর কি।

" হ্যাঁ,, আসবোনা বলেছিলাম। বাট এখন তো দেখছি না আসলে কারো এতো সুন্দর ফিগারটা মিস করতাম। আফটার অল কোমর, পেট, আর পিঠ দেখিয়ে শাড়ী পড়েছিস না?? "

বলেই বাঁকা হাসলো আয়াশ। তারপর চারপাশে একবার তাকিয়ে ইশার কোমরে এক হাত রেখে এক টানে ইশাকে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো। ইশা তো রীতিমতো লজ্জায় আর ভয়ে একবার আয়াশের মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিজের কোমরের দিকে তাকাচ্ছে। কি করছে আয়শা এটা??  বিয়ে বাড়ির এতো মানুষের ভিড়ে ওর সাথে এমন করার মানে কি?? লোকজন কেমন করে তাকাচ্ছে। ইশার তো লজ্জায় এখনই মাটির সাথে মিশে যেতে মন চাইছে। ইশা নিজেকে আয়াশের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে চাপা স্বরে বললো---

" ভাইয়া এসব কি করছিস??  ছাড়। সবাই দেখছে তো। প্লিজ ভাইয়া ছাড়। সবাই কি ভাববে বল তো।  প্লিজ ছাড় না.....! "

কিন্তু ইশার কথা যেন আয়াশের কানেই পৌঁছালো না। বরং আয়াশ আরও একটু শক্ত করে ইশাকে নিজের সাথে চেপে ধরলো। তারপর ইশার কানের কাছে মুখ নিয়ে পিস পিসিয়ে বললো----

" ছাড়তে বলছিস কেন?? কেউ একজন এসে এভাবে কোমরে হাত রেখে জড়িয়ে ধরবে বলেই তো এমন কোমর দেখিয়ে শাড়ী পড়েছিস, তাই না??  সত্যি বলছি, তোকে আজ অনেক বেশি হট লাগছে। "

আয়াশের লাস্টের বলা কথা গুলো ইশার কান ভেদ করে মস্তিষ্কে পৌঁছানোর সাথে সাথেই ইশার পুরো শরীর যেন অসার হয়ে এলো। আয়াশ এসব কি বলছে কি?? ওর কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেছে নাকি?? একে তো এমন ভরপুর বিয়ে বাড়িতে ওকে বুকের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। তার উপর এখন কিসব কথা বলছে। ইশার যেন এবার অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। তাই  আবারও জোর দিয়ে নিজেকে আয়াশের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো----- 

" ভাইয়া তোর কি আজ মাথা টাথা সব গেছে??  এসব কোন ধরনের কথা বলছিস?? নেশা করে আসিসনি তো আবার?? প্লিজ ছাড় আমায়। সবাই খারাপ বলবে। অবশ্য তোর কিছু হবেনা এতে। কারণ তুই ছেলে। তোকে কেউ কিছু বলবেনা। যা হওয়ার বা যা বলার সবই তো আমাকেই বলবে। কারণ আমি যে মেয়ে। তাই প্লিজ ছাড় আমায়। "

ইশার এবারের বলা কথা গুলো শুনতেই কেন যেন আয়াশ বাঁধনটা হালকা করে দিলো। তবে একেবারে ছেড়ে দিলোনা। হালকা করে ধরে রেখে তাচ্ছিল্য হাসলো। আয়াশের এমন তাচ্ছিল্য মার্কা হাসি দেখে ইশার অন্তর আত্মা শুকিয়ে আসলো। ছলছল নয়নে আয়াশের চোখে চোখ রেখে ভেজা গলায় বললো----

" ভাইয়া ছাড় না...!  প্লিজজজজজজ! 

" ও তাই?? ছাড়তেই হবে??

" হুমমমম।

" ওকে, ছেড়ে দেবো। তার আগে এইটা বল যে তোকে শাড়ী পড়ার পারমিশন কে দিয়েছে?? না মানে, আমি তো তোকে শাড়ী পড়ার পারমিশন টা কোনো কালেই দিই নি। ইনফ্যাক্ট শাড়ী পড়তে নিষেধ করেছি তোকে। তাই ভাবছি যে তোকে পারমিশনটা দিয়েছে তাকে সাথে করে গরম গরম এক কাপ চা পান করতাম আর কি। বল তো কে সেই মহান ব্যক্তি যার কথায় তুই এতো সুন্দর করে শাড়ী পড়েছিস তাও আবার কোমর দৃশ্যমান করে?? "

আয়াশ কথা গুলো শান্ত কণ্ঠে বললেও; ও ভিতরে ভিতরে যে কতোটা রাগ করেছে সেটা ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ইশা এবার ঘাবড়ে গেলো। কি বলবে এখন সে?? সত্যিই তো আয়াশ ওকে নিষেধ করেছিলো শাড়ী পড়তে। আয়াশ এটাও বলে দিয়েছে ওকে যে কোনো দিন শাড়ী পড়তে ইচ্ছে হলে নিজের রুমেই যেন পড়ে, অন্য কারো সামনে যেন না পড়ে। এমনকি ওর সামনেও যেন না পড়ে। আর ইশা কিনা ওর কথার বিরুদ্ধে গিয়ে শাড়ী পড়েছে? তাও আবার এই ভরপুর বিয়ে বাড়িতে?? আয়াশ কি করবে ওর সাথে সেটা ভাবতেই ইশার চোখগুলো জলে ভরে গেছে। ইশা জানে, আয়াশ এখন নিশ্চয় ওকে বড় ধরনের কোনো শাস্তি দিবে। কারণ ইশা যতবারই আয়াশের কথা অমান্য করেছে, ততবারই আয়াশ ওকে কোনো না কোনো শাস্তি দিয়েছে। তাই আজও যে কোনো শাস্তি না দিয়ে ছাড়বে না আয়াশ সেটা ইশা ভালো করেই বুঝে গেছে। ইশা যখন আয়াশের শাস্তির কথা ভাবতে ভাবতে ভাবনার অতল সাগরে মগ্ন তখনই আয়াশ আবারও হুংকার ছাড়লো। 

" কি হলো? কিছু বলছিস না কেন?? তোকে কে পারমিশন দিয়েছে শাড়ী পড়ার হ্যাঁ?? তোর সাহস কি করে হয় আমার কথা অমান্য করার?? বল, জবাব দে। আই সেইড জাস্ট টেল মি, ডেম ইট। "

কথাগুলো বলেই আয়াশ ইশাকে ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিলো। তারপর আবারও রাগী গলায় বললো---

" তোর অনেক সাহস বেড়েছে, না?? দাঁড়া, তোর বিয়েতে আসা আমি জন্মের মতো গুছাচ্ছি। জলদি গিয়ে লাগেজ গুছিয়ে নে। আমরা এক্ষুনি বের হবো। "

ইশা নিশ্চুপ। ইশাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াশ আবারও রাগী কণ্ঠে বললো---- 

" কি হলো? এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা। আই সেইড গো। "

আয়াশের এমন ভুবন কাঁপানো ধমকে শুধু ইশা-ই নয়; পুরো বিয়ে বাড়ি কেঁপে উঠলো যেন। সবার দৃষ্টি এবার আয়াশ আর ইশাতেই আবদ্ধ হলো। আয়াশের এমন ব্যবহার যেন কেউ-ই মেনে নিতে পারছেনা। কারণ আয়াশ খুবই ভদ্র এবং ভালো একজন ছেলে। ছোট বড় সবার সাথে খুব বিনয়ী এবং নম্র হয়ে কথা বলে। কিন্তু হঠাৎ এমন কি হয়ে গেলো যে ইশার সাথে এইরকম আচরণ করছে? তাও আবার এই ভরা বিয়ে বাড়িতে? সেটাই কারো বুঝে আসছেনা। আয়াশের এমন ব্যবহারে ইশা এবার ভীষণ অপমান বোধ করলো। আয়াশ কিনা এতোগুলা মানুষের সামনে ওর সাথে এমন বিহেভ করছে??  ইশার চোখ থেকে টুপ করে দু'ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো।  জলে টইটম্বুর চোখ নিয়ে আয়াশের দিকে তাকালো। আয়াশ রেগে আরও কিছু বলতে যাবে; তখনই ভীড় ঠেলে একজন মধ্যবয়ষ্ক মহিলা বেরিয়ে আসলেন। আয়াশকে দেখে মহিলাটি যেন বেশ অবাক হলেন। সাথে খুশিও হলেন অনেক। যেটা উনার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। মহিলাটি আয়াশের সামনে এসে আয়াশের কাঁধে হাত রেখে উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন----

" আয়াশ বাবা! তুই এসেছিস??  কখন এসছিস?? 

" হ্যাঁ এসেছি। এক্ষুনি আসলাম।

" যাক ভালোই হয়েছে। তুই এসছিস দেখে আমার খুব ভালো লাগছে। চল ভিতরে চল।

" নাহ ফুফি! আমি ভিতরে যাবো না। আমি এখনই চলে যাবো। আসলে আমি ইশাকে নিতেই এসেছি। চল ইশা। "

আয়াশের কথা শুনে মিনু রহমান; অর্থাৎ আয়াশের ফুফি বেশ অবাক হলেন। অবাক কণ্ঠে বললেন-----

" মানে? এখন চলে যাবি মানে কি?? আর ইশাকে নিতে এসছিস মানেই বা কি?? আর একটু পর গায়ে হলুদ। আর তুই বলছিস তুই ইশাকে নিয়ে যেতে এসেছিস?? এসবের মানে কি বাবা?? "

আয়াশের মুখে নিজের চলে যাওয়ার কথা শুনে ইশার খুবই মন খারাপ হলো। আর কিছুক্ষণ পরই তো হলুদের অনুষ্ঠান। হলুদের জন্য এতো সুন্দর করে সেজেছে সে। আর আয়াশ কিনা ওকে নিয়ে যাবে?? ইশা এবার ফুফির পিছনে এসে ফুফির গলা জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো। তারপর আদুরে গলায় কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো---

" ফুফি! আমি এখান থেকে কোত্থাও যাবোনা। এখনও তো হলুদের অনুষ্ঠানও হয়নি। আর ভাইয়া বলছে ও নাকি আমায় নিয়ে যাবে। প্লিজ ফুফি! তুমি ভাইয়াকে মানা করো আমায় যেন না নিয়ে যায়। ওর চলে যাওয়ার হলে ও যাক। বাট আমি যাবোনা। হুমমমম। "

মিনু রহমান ভাইজির কথা শুনে হাসলেন। উনি ইশার গালে আলতো করে হাত রেখে আয়াশের দিকে তাকালেন। ইশাও ফুফিকে জড়িয়ে ধরে সেই আগের মতো দাঁড়িয়ে রইলো। মিনু রহমান আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বললেন-----

" আয়াশ! এখন এখান থেকে না ইশা যাবে। আর না তুই যাবি। দেখ বাবা, একে তো ভাইজান আর ভাবিরা কেউ আসলোনা। তার উপর এখন তুইও এসে চলে যাবি বলছিস। তাও আবার ইশাকে নিয়ে। আমার কি ভালো লাগবে, বল?? আর তাই বৌ-ভাত শেষ না হওয়া অব্দি তোরা কেউ কোত্থাও যাচ্ছিস না। এই আমি বলে দিলাম। 

" Sorry ফুফি! আমার থাকা হবে না। ইনফ্যাক্ট ইশারও থাকা হবেনা। তুমি জোর করোনা প্লিজ। তাহলে আমি ফেলতে পারবোনা। আমাদেরকে যেতে দাও। ইশা যা, জলদি গিয়ে লাগেজ গুছিয়ে নে। আর হ্যাঁ, শাড়ী যেন চেঞ্জ করা দেখি। নয়তো আমি.......

মিনু রহমান এবার একটু জোরেই হেসে দিলেন। হয়তো আয়াশের রাগার কারণটা উনি বুঝতে পেরেছেন। উনি বাঁকা হেসে সন্দিহান চোখে আয়াশের দিকে তাকালেন। মুচকি হেসে বললেন-----

" আয়াশ! বাই এনি চান্স, তোর রাগের কারণটা কি ইশার শাড়ী?  নাকি অন্য কিছু?? হুমমম?? " 

আয়াশ কিছু বলতে গিয়েও বললোনা। বরং নাক মুখ কুঁচকে আশেপাশে তাকাতে লাগলো। ভাইপোর এমন চাহনি দেখে মিনু রহমানও এবার ভাইপোর দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালেন। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে। মিনু রহমান মুচকি হেসে সবাইকে চলে যেতে বললেন। আর এটাও বললেন যে, আয়াশ উনার ভাইয়ের ছেলে। তাই কেউ যেন একটু আগের বিষয়টা নিয়ে কোনোরকম কানা ঘোষা না করে। সবাই বিরক্তি মুখ নিয়ে চলে গেলেন। ওদের হয়তো এতো সময় ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আয়াশ আর ইশার কাজ দেখতে ভালোই লাগছিলো। তাই তো মিনু রহমানের চলে যেতে বলাতে সবার মুখটা এমন ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করেছে। সবাই চলে যেতেই মিনু রহমান আবারও আয়াশেের চোখে চোখ রাখলেন। তারপর হেসে বললেন----

" এবার বল, ইশার উপর এতো রাগ কেন যে ওকে এখনই নিয়ে যেতে চাইছিস?? আচ্ছা রাগটা কি ইশার উপর? নাকি ইশার শাড়ীর উপর?? কোনটা?? "

আয়াশ কিছু বলতে যাবে তার আগেই গাল ফুলিয়ে ইশা বলে উঠলো----

" আরে ফুফি! তুমি বুঝতে পারছোনা? উনার সব রাগ তো আমার শাড়ীর উপর। আমি নাকি শাড়ী পড়েছি বলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে। আচ্ছা তুমিই বলো, মহাভারত কি আজ লিখা হচ্ছে যে আমার শাড়ী পড়াতে অশুদ্ধ হয়ে যাবে?? মহাভারত তো অনেক আগেই লিখা হয়েছে; সেই ঊনিশশো কটকটি সালে। এখন যদি আমার শাড়ী পড়াতে এতো বছর পর সেটা অশুদ্ধ হয়ে যায়। তাহলে আমি কি করবো?? 

" বাজে কথা বলা রাখবি?? একটা থাপ্পড় দিবো। ফাউল কোথাকার।  আচ্ছা ফুফি! তুমিই বলো তো, মেয়েরা শাড়ী কখন পড়ে??

আয়াশের প্রশ্ন শুনে মিনু রহমান আলতো হেসে বললেন--- " কেন? বিয়ের পর। "

" শুনলি ফুফি কি বলেছে?? মেয়েরা বিয়ের পর শাড়ী পড়ে। আর তোর কি এখনও বিয়ে হয়েছে নাকি যে তুই শাড়ী পড়বি?? তোর মতো পাগলরাই পারে বিয়ের আগে শাড়ী পড়তে। যত্তসব আঝাইরা পাবলিক। আগে তো বিয়েটা কর; তারপর আর কেউ বাঁধা দিবেনা শাড়ী পড়তে। 

" আয়াশ! তাহলে বিয়েটা করে ফেল। 

মিনু রহমানের কথা শুনে আয়াশ আমতা আমতা গলায় বললো --- " ম ম মানে?? "

" না মানে তাহলে ইশার বিয়েটা দিয়ে দে। 

" ও, তাই বলো। আচ্ছা তোমার ভাইজির কি এখনও বিয়ের বয়স হয়েছে যে বিয়ে দিয়ে দেবো?? আগে স্টাডি টা তো কমপ্লেট করুক। তারপর বিয়ের কথা ভাবা যাবে। 

" বুঝলাম। এখন চল তো। ভিতরে চল। সেই কখন থেকে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস।  আয় ঘরে যাবি। 

" আচ্ছা তোমরা যাও। আমি বরং বাবা-মা'কে কল করে আমার আসার খবরটা দিয়ে আসি। আর ওদেরকেও বিয়েতে আসতে বলি।  আর হ্যাঁ, এই যে ম্যাডাম! আপনাকে বলছি। আমি যদি ভিতরে এসে শাড়ীটা গায়ে দেখি না.... শাড়ীর সাথে আপনাকে সহ পিস পিস করে কেটে রেখে দিবো। মাইন্ড ইট। "

কিন্তু এইবার আর আয়াশের কথাকে পাত্তা না দিয়ে ইশা 'হুহ্" বলে মুখ বাঁকিয়ে ফুফির হাত ধরে ভিতরে চলে গেলো। আয়াশও ফোন কানে ধরে বাইরের দিকে চলে গেলো। ইশা নিজের রুমে এসে দ্রুত শাড়ীটা চেঞ্জ করে নিলো। নয়তো রাক্ষসটা এসে সত্যি সত্যি শাড়ীর সাথে ওকে সহ পিস পিস করে কেটে ফেলবে। কারণ আয়াশ যেটা বলে সেটাই করে। কিন্তু বোকা ইশা তো জানেই না, আয়াশ ওকে ভয় দেখানোর জন্যই শুধু কথাটা বলেছে। যাতে শাড়ী চেঞ্জ করে নেই সে। খানিক বাদে আয়াশ বাহির থেকে ভিতরে আসলো। সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় ফুফির সাথে দেখা হয়ে গেলো। আয়াশকে দেখে মিনু রহমান হেসে বললেন---- 

" আয়াশ! বাবা কথা বলেছিস ভাইজান আর ভাবির সাথে?? কি বলেছে ওরা?? আসবে বলেছে?? 

" আরে ফুফি! আসবে বলেছে কি?? ওরা অলরেডি রওনা দিয়ে দিয়েছে। এই আসছি বলে। 

" সত্যিই...? ভালোই হলো তাহলে। তোকে অনেক ধন্যবাদ বাবা। তোর এতো ইম্পর্ট্যান্ট কাজ রেখে এসেছিস বলে এখন ভাইয়া ভাবিরাও সবাই আসছে। নয়তো ওরা তো বলেছিলো তুই আসতে পারবিনা বলে কেউ বিয়েতে আসবেনা। আচ্ছা এখন তুই রুমে যা। আমি তুদের জন্য খাবার নিয়ে আসছি। 

" কোন রুমে যাবো ফুফি?? যেই হারে মেহমান দেখছি, আমার তো মনে হয় একটা রুমও খালি নেই। 

" ধুর পাগল! তাই বলে তুই রুম পাবি না?? তুই ইশার রুমে চলে যা। ইশা রুমেই আছে। "

কথাটা বলেই মিনু রহমান দ্রুত পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন। আয়াশকে আর কিছু বলার সুযোগই দিলেন না। আয়াশও আর কোনো উপায় না পেয়ে উপরে চলে গেলো। ইশা সবে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েছে। পরনে একটা হোয়াইট এন্ড স্কাই কালার কম্বিনেশনের গ্রাউন্ড। সাদা এবং আকাশী কালারটা ইশার সৌন্দর্যকে যেন আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যদিও ইশা তেমন বেশি ফর্সা না। আবার কালোও না। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের গায়ের রং ইশার। আর এই রংটিতেই যেন ইশাকে মারাত্মক সুন্দর লাগে। উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের শরীরটিতে হোয়াইট এন্ড স্কাই কালারটা যেন দারুণ মানিয়েছে। ইশা ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার দেখে নিলো। তারপর যা কিছু অগোছালো আছে সেগুলো গুছিয়ে নিলো। ইশা যখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে গুছাতে ব্যস্ত; তখনই দরজা ঠেলে আয়াশ ভিতরে ঢুকলো। ইশা একবার দরজার দিকে তাকিয়ে আবারও নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কারণ ইশা চাই হলুদের অনুষ্ঠানে যেন সবার থেকে ওকেই বেশি সুন্দর লাগে। কিন্তু ওকে যে না সাজলেও সবার থেকে বেশি সুন্দরী লাগে; সেটা ইশা বুঝতে চায় না। ওর মনে হয় ওকে দেখে রহিমা, হালিমা, কিংবা রোকেয়ার মতো দেখতে লাগে। আয়াশ ভিতরে ঢুকে দরজাটা লাগিয়ে যেই না ইশার দিকে তাকালো, অমনিই চোখটা কিছু সময়ের জন্য ইশাতে আবদ্ধ হয়ে গেলো। ইশাকে এই মুহূর্তে আয়াশের কাছে যতোটা মোহময়ী আর আবেদনময়ী লাগছে; ততোটা সৌন্দর্য হয়তো আয়াশ আগে কখনো কোনো নারীর মধ্যেই খোঁজে পায়নি। আয়াশের কেমন যেন ঘুর ধরতে লাগলো চোখে। মাথায় হাজারো উদ্ভট চিন্তা খেলা করতে লাগলো। আয়াশের এখন একটা কথায় মাথায় আসছে।  আর সেটা হলো, যেখানে সে নিজেই ইশার দিক থেকে চোখ ফিরাতে পারছেনা। সেখানে হলুদের অনুষ্ঠানে তো অনেক ছেলে থাকবে। ওরা কি তাহলে ওর ইশাকে বাজে দৃষ্টিতে দেখবে?? তাহলে কি ওর ইশা পর পুরুষের কু-দৃষ্টির স্বীকার হবে?? কিন্তু আয়াশ তো সেটা চায় না। আয়াশ চাই ওর প্রাণ ভোমরার সৌন্দর্য় শুধু সে নিজেই দেখবে। এই সৌন্দর্য় আর কাউকে দেখতে দেবে না সে। কিছুতেই না। তার জন্য যা কিছু করতে হয় সে করবে। আয়াশ এসব ভাবতে ভাবতে খাটে গিয়ে ধপাস করে বসে পড়লো। ইশা তখনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঠিক করছে। আয়াশকে এমন শব্দ করে বসতে দেখে আয়নায় আয়াশের প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে ইশা মুখ বাঁকালো। আয়াশ ইশার দিকে না তাকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পা নাড়াতে নাড়াতে গম্ভীর কণ্ঠে বললো----

" বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতাতে নাম দিয়েছিস নাকি?? "

ততক্ষণে ইশার নিজেকে গুছানো শেষ। তাই সে এবার আয়াশের সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর বললো----

" মানে বুঝলাম না। আমি কেন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম দিতে যাবো?? আমি কি অতো সুন্দরী নাকি যে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম দিবো?? "

আয়াশ এবার ইশার দিকে তাকালো। বললো---

" না মানে সেই কখন থেকে দেখছি সাজতে ব্যস্ত আছিস। তাই বললাম আর কি। অবশ্য তুই ঠিকই বলেছিস, তুই কি অতো সুন্দরী নাকি যে বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নাম দিবি?? তোকে তো আম গাছের পেত্নীর মতো লাগছে। তোর দ্বারা এসব হবেনা। তুই বরং ঘুমিয়ে পড়। সেটাই ভালো হবে। নয়তো দেখবি, হলুদের অনুষ্ঠানে তোকে দেখে সবাই হাসছে। (হাহাহা)

" তার মানে আমাকে সুন্দর লাগছে, তাই না?? "

চলবে........
®আয়মন সিদ্দিকা উর্মি

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ হৃদয় জুড়ে শুধুই তুই ♥ || পর্ব - ০১ || সেরা রোমান্টিক উপন্যাস || ভালোবাসার গল্প | AduriPakhi - আদুরি পাখি এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি