আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো | পর্ব - ২১ | ভালোবাসার গল্প | উপন্যাস

যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো, উপন্যাস, রোমান্টিক উপন্যাস, ভালোবাসার সেরা রোমান্টিক গল্প, ভালোবাসার গল্প, প্রেমের গল্প, প্রেমের উপন্যাস, গল্প,
Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated
যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান 
২১.

পড়ন্ত বিকেলে তরী ক্লান্ত চোখ মেলে তাকাতেই প্রচন্ড দূর্বল অনুভব করে। ব্যথা উপশমের জন্য ইঞ্জেকশন দেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো সে। সেই তীব্র ব্যথার প্রভাব এখন কিছুটা কম অনুভব হলেও তার রেশ কিছুটা রয়ে গিয়েছে এখনো। তরী ঘাড় ঘুরিয়ে পাশে ফিরে তাকাতেই দেখে পার্থ বেডের পাশে একটা চেয়ারে বসে আছে। তরীকে চোখ মেলতে দেখেই সে বসা থেকে উঠে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করে, 

“ এখন কেমন লাগছে? “ 

তরী জবাব দেয় না। সে একহাতে ভর দিয়ে উঠে বসে। ক্লান্ত গলায় বলে, 

“ পানি। “ 

পার্থ সাথে সাথে একটা পানির বোতল খুলে এগিয়ে দেয় তার দিকে। কিছুটা পানি মুখে দিতেই তরীর আচমকা মনে পড়ে আইয়াদের কথা। সে তো সার্জারি চলাকালীন অবস্থায় সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে আইয়াদের পরে কি হয়েছে? তরী সাথে সাথে পানির বোতল রেখে বেড থেকে নামতে উদ্যত হয়। পার্থ মৃদু চিন্তিত গলায় বলে, 

“ কোথায় যাচ্ছেন? ইউ নিড রেস্ট। “ 

তরী চিন্তিত দৃষ্টি মেলে পার্থর দিকে তাকিয়ে শুধায়,

“ আমার পেশেন্ট… আই নিড টু সি হিম। “ 

বলেই তরী কোনোমতে তাড়াতাড়ি বেড থেকে নামে। তখনই কেবিনে প্রবেশ করে হুমায়ুন রশীদ এবং ডক্টর আনিকা। তরী তাদের দেখে প্রশ্ন করে, 

“ পাপা? আইয়াদ? সার্জারি কেমন হয়েছে? “ 

হুমায়ুন রশীদ জবাব দেয় না। তিনি নীরব ভূমিকা পালন করেন। কিন্তু ডক্টর আনিকা অগ্নিদৃষ্টি মেলে তরীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, 

“ আপনি ড্রাগস নিয়ে সার্জারি করার সাহস কোথা থেকে পেলেন ডক্টর তরী? “ 

তরী বিস্মিত হয়। অবাক সুরে প্রশ্ন করে, 

“ ড্রাগস মানে? “ 

“ বিশ্বাস না হলে নিজে রিপোর্টস চেক করুন নিজের। “ 

তরী হুমায়ুন রশীদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, 

“ পাপা? কি বলছে এসব? “ 

ডক্টর আনিকা রাগী সুরে বলে উঠে, 

“ আপনার শরীরে যেসব রিয়্যাকশন হচ্ছিলো সেসব ড্রাগস নেওয়ার ফলে হয়েছে। “ 

তরীর মাথার উপর যেন বজ্রপাত হয়। সে বলে, 

“ আমি কোনো ড্রাগস নেই নি। আমি কেন ড্রাগস নিবো? “ 

“ আপনি কেন ড্রাগস নিবেন তা আমরা জানিনা ডক্টর তরী। কিন্তু আপনার ভুলের কারণে একজনের মৃত্যু হয়েছে। ইউ কিলড এ চাইল্ড। অপারেশন থিয়েটারে উপস্থিত সকলে আপনার এই ভুলের সাক্ষী। “ 

তরী সাথে সাথে কেদে দেয়। সে কান্না জর্জরিত গলায় বলে, 

“ আইয়াদ ইজ ডেড? “ 

ডক্টর আনিকা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে, 

“ থ্যাংকস টু ইউ। “ 

তরী হুমায়ুন রশীদের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার হাত ধরে বলে, 

“ পাপা ট্রাস্ট মি আমি ড্রাগস নেই নি। আমি কোনো ভুল করি নি। বিশ্বাস করো। “ 

ডক্টর আনিকা পাশ থেকে বলে উঠে, 

“ স্যার? নিজের মেয়ে আর নিজের হসপিটাল দেখে কি এখন ডক্টর তরীকে ছাড় দিয়ে দিবেন? একটা পেশেন্টের লাইফের কি কোনো মূল্য নেই আপনার কাছে? “ 

হুমায়ুন রশীদ হেরে যাওয়া দৃষ্টি নিয়ে নিজের মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে, 

“ আই ট্রাস্ট ইউ। আমি জানি তুমি কখনোই ড্রাগস নিতে পারো না। কিন্তু যেই মুহুর্তে তোমার মনে হয়েছে যে ইউ আর ফিলিং নট গুড সেই মুহুর্তে তুমি সার্জারি অন্য কারো হাতে হ্যান্ডভার করো নি কেন? “

এতক্ষণের কথায় তরী যতটা না আঘাত পেয়েছে তার থেকে বেশি যন্ত্রণা এই মুহুর্তে অনুভব করছে সে। ডক্টর আনিকা বলে উঠে, 

“ বোর্ড মিটিং ডাকা হয়েছে। ইউ হ্যাভ টু জয়েন আস ডক্টর তরী। “ 

তরী মূর্তির ন্যায় তার পাপার দিকে তাকিয়ে রয়। হুমায়ুন রশীদ বলে, 

“ চলো তরী। “ 

কথাটা বলেই উনি বেরিয়ে যায়। উনার পিছুপিছু ডক্টর আনিকাও বেরিয়ে যায়। তরী নিশ্চুপ ভঙ্গিতে মাথা নত করে বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে হাতে টান অনুভব করে। পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখে পার্থ তার একহাত ধরে রেখেছে। পার্থ শান্ত স্বরে বলে উঠে, 

“ আই ট্রাস্ট ইউ। নিজের মাথা নত করবেন না। “ 

তরী ফ্যালফ্যাল করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের হাত আলতো করে ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। 

__________

এক ঘন্টার থেকেও দীর্ঘ সময়ের বোর্ড মিটিংয়ে সকলেই তরীর বিপক্ষে নিজেদের স্টেটমেন্ট দেয়। সবার মতেই তরীর এই ভুল কোনো ভাবেই ক্ষমার যোগ্য নয়। তরী নীরব দর্শকের ন্যায় মাথা নত করে সবার কথা শুনে। সর্বদা নিজের জন্য স্ট্যান্ড নেওয়া তরী এইবার নিজের সাফাইয়ে একটা বাক্যও উচ্চারণ করে না। কিছুক্ষণের ব্যবধানেই তরীর সামনে একটা লিগ্যাল পেপার এনে রাখে একজন ডক্টর। তরীর অনুভূতি যেন ভোতা হয়ে গিয়েছে। সে চুপচাপ সেই পেপারের দিকে তাকিয়ে রয়। হুমায়ুন রশীদ নিজের চোখের সামনে এই দৃশ্য সহ্য করতে পারছে না। তবুও উনি নিজেকে শক্ত করে। নিজের ব্লেজারের পকেট হতে একটা কলম বের করে তা তরীর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, 

“ সব ভুলের ক্ষমা আছে, কিন্তু একজন ডক্টরের ভুলের কোনো ক্ষমা নেই। ডক্টরস আর নট এলাউড টু ডু এনি মিস্টেক। ইউর মেডিক্যাল লাইসেন্স ইজ টার্মিনিটেড। ইউ আর নট এ ডক্টর এনিমোর। “ 

শেষের দিকে হুমায়ুন রশীদের গলা ধরে আসে। তিনি একটা ঢোক গিয়ে আবার বলে উঠে, 

“ সাইন দ্যা পেপারস। “ 

তরী মাথা তুলে তাকায় না। সে নিঃশব্দে কলমটা নিয়ে পেপারের উপর মৃদু ঝুকে সাইন করার উদ্দেশ্যে। মুহুর্তেই তার চোখের সামনে ভেসে উঠে নিজের সম্পূর্ণ জীবনের অক্লান্ত পরিশ্রম। শত নির্ঘুম রাত জেগে অক্লান্ত পরিশ্রমের পর নিজের স্বপ্ন পূরণ করার পর হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে যেরকম অনুভব হয়, তার সেরকম অনুভব হচ্ছে। তরীর নীরব অশ্রু টপটপ করে পড়ে কাগজ গুলো ভিজিয়ে দিচ্ছে। আরেকজন বোর্ড মেম্বার কঠিন স্বরে বলে উঠে, 

“ দ্রুত সাইন করুন। “ 

তরী কাঁপা হাতে নিজের এতদিনের পরিচয় নিঃশেষ হওয়ার পত্রে সিগনেচার করে। ডক্টর আনিকা কাঠকাঠ গলায় বলে, 

“ যাওয়ার আগে পেশেন্টের ফ্যামিলি মেম্বারদের থেকে ক্ষমা চেয়ে নিবেন। ইউ আর লাকি যে উনারা আপনার বিরুদ্ধে কোনো কেস ফাইল করে নি। “ 

তরী মাথা নত করেই বেরিয়ে যেতে নিলে ডক্টর আনিকা আবার বলে উঠে, 

“ আপনার এপ্রোন এবং স্টেথোস্কোপটা রেখে যান। ইউ ডোন্ট নিড দ্যাট এনিমোর। “ 

তরী নিজের গায়ে থাকা এপ্রোনের একটা কোণা শক্ত হাতে চেপে ধরে। যেন কেউ তার গা থেকে এই এপ্রোন কেড়ে নিতে পারবে না। অন্য হাতে সে নিজের হাতে থাকা স্টেথোস্কোপটা শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রয়। ডক্টর সীমা এগিয়ে এসে তরীর হাত থেকে স্টেথোস্কোপটা নিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠে, 

“ এই পোশাক আর এইসব সরঞ্জাম আমরা জীবন বাঁচানোর জন্য ব্যবহার করি। আপনার কাছে এসব শোভা পাচ্ছে না। “ 

তরী দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না দমিয়ে রেখে গায়ের এপ্রোন খুলে এক দৌড়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। দৌড়াতে দৌড়াতে থার্ড ফ্লোরের শেষ মাথায় এসে সে পার্থর মুখোমুখি হয়। পার্থ কোনো প্রশ্ন করার আগেই তরী বলে, 

“ বাসায় ফিরবো আমি। নিয়ে চলুন প্লিজ। “ 

__________

সন্ধ্যা বেলায় আজ চৌধুরী নিবাসে ছোট খাটো আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছেন সকলে। সাদিকা বেগমের আবদারে শোভন আজ মধুকে নিয়ে বাসায় এসেছে। আফজাল সাহেবও বাসায় উপস্থিত আছেন। সকলেই সন্ধ্যার নাস্তার পাশাপাশি খোশ গল্পে ব্যস্ত। আফজাল সাহেব ইতিমধ্যে তার হবু ছোট ছেলে বউয়ের গুণে মুগ্ধ। মেয়েটা বেশ হাসিখুশি এবং খোলা মনের। সহজেই সবার সাথে মিশে যেতে পারে। এই সন্ধ্যার নাস্তা গুলোও মেয়েটা নিজ হাতে বানিয়েছে, যার স্বাদ দুর্দান্ত। 

সাদিকা বেগম মধুর সাথে গল্পের মাঝেই শোভনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, 

“ এই শোভন। তোর দাদা আর ভাবীকে ফোন দে। কখন ফিরবে জিজ্ঞেস কর। মেয়েটা আজকে এতো সকাল সকাল বেরিয়ে গেলো। এতো করে বললাম নাস্তাও করে যায় নি। সারাদিন খেয়েছে কিনা কে জানে। এতো বার ফোন দিলাম ফোন অফ আসছে। “ 

“ দিচ্ছি আম্মা। “ 

বলেই শোভন আগে নিজের ভাবীর নাম্বারে ডায়াল করে। কিন্তু ফোন সুইচড অফ আসছে। সে পার্থর নাম্বার ডায়াল করতে নিবে তখনই বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। জমিলা খালা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। তরী আর পার্থ ভিতরে প্রবেশ করতেই সাদিকা বেগম হেসে বলে উঠে, 

“ আম্মু? সারাদিন তোমাকে ফোন দিচ্ছি নাম্বার বন্ধ আসছিলো কেন? “ 

তরী কারো দিকে ফিরে তাকায় না। এক মুহুর্ত দাঁড়ায়ও না। সে নীরব পায়ে হেঁটে উপরে চলে যায়। তার এহেন আচরণে সকলে বেশ অবাক হয়। আফজাল সাহেব পার্থকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে, 

“ ওর কি হয়েছে? “ 

পার্থ সিঁড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রয়। তরীর মেডিক্যাল লাইসেন্স টার্মিনেশনের ব্যাপারটা তার অজানা নয়। সে জমিলা খালার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে, 

“ খালা ভাত আছে? “ 

“ না। “ 

“ তাহলে একটু ভাত বসান। আর তরকারি গরম করে একটু বেড়ে দিন। “ 

জমিলা খালা রান্নাঘরে চলে যায়। আফজাল সাহেব আবার প্রশ্ন করেন, 

“ এবার বলো কি হয়েছে? “ 

__________

ভাতের প্লেট হাতে বেডরুমে প্রবেশ করতেই পার্থ দেখে চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকারে ছেয়ে আছে। সে অন্ধকারেই হাতড়ে পরিচিত সুইচবোর্ড হতে সুইচ চেপে রুমের লাইট জ্বালিয়ে দেয়। চারিদিকে চোখ বুলাতেই দেখতে পায় তরী রুমের এককোণে ফ্লোরে হাঁটুতে মুখ গুজে বসে আছে। পার্থ এগিয়ে গিয়ে তরীর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। প্লেটটা একপাশে রেখে সে একহাত বাড়িয়ে স্ত্রীর মাথার উপর রেখে নরম সুরে ডাকে,

“ তরী? “ 

তরী উত্তর দেয় না। পার্থ আবারও ডেকে বলে, 

“ সকালে নাস্তা করে যান নি। সারাদিন না খাওয়া। ভাত খেয়ে নিন। “ 

তরী মাথা তুলে তাকায়। পার্থ নিজের স্ত্রীর লাল টকটকে চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাষা হারায়। তরী থমথমে গলায় বলে, 

“ খাবো না। চলে যান। “ 

পার্থ একদন্ড নিজের শুকনো গলা ভিজিয়ে নিয়ে বলে উঠে, 

“ প্লিজ তরী। “ 

তরী আচমকা একটা অদ্ভুত কান্ড ঘটিয়ে বসে। সে তার পাশে রাখে প্লেট তুলে দূরে ছুড়ে ফেলে বলে উঠে, 

“ চলে যেতে বলেছি না? সমস্যা কি? যাচ্ছেন না কেন? “ 

কথাটা বলতে বলতে তরী আবার হাতের কাছের আরেকটা জিনিস তুলে নিতে নেয় আছাড় মারার জন্য। পার্থ সেই সুযোগ না দিয়ে তরীর দুই হাত শক্ত করে নিজের হাতের মুঠোয় আঁকড়ে ধরে বলে উঠে, 

“ নিজেকে সামলান। “ 

তরীর সারাদিনের চেপে রাখা কান্না তার সবথেকে অপছন্দের মানুষের সামনেই বাধ ভাঙলো। সে হাত পা ছেড়ে দিয়ে বসে দু'হাতে নিজের মাথার চুল টেনে ধরে বলে উঠলো, 

“ আমি বাচ্চাটাকে মারি নি। আমি ড্রাগস নেই নি। “ 

অত:পর আরো কিছু বললো তরী যা পার্থর বোধগম্য হলো না। সে কেবল এগিয়ে একহাতে তরীকে আগলে ধরলো। আপন দুঃখে হয়তো এই মুহুর্তে তরীর মাথা কাজ করছে না। তাই তো কাঁদতে কাঁদতে সে তার সামনে বসে থাকা মানুষটার বুকে মাথা ঠেকায়। পার্থ নিজের দ্বিধা দন্ড কাটিয়ে এক হাত তরীর মাথায় রাখে। তরী এবার পার্থর পাঞ্জাবির বুকের অংশ খামচে ধরে অশ্রুসিক্ত স্বরে বলে উঠে, 

“ আমার সম্পূর্ণ ক্যারিয়ার শেষ। আমার ১২ বছরের পরিশ্রম সব শেষ। আমি আর ডক্টর নই। কি করবো আমি? এই খুনের দায় নিয়ে কিভাবে বাঁচবো আমি? কিভাবে সবাইকে বিশ্বাস করাবো আমি খুনী নই? “ 

পার্থ নরম গলায় বলে, 

“ আমি আছি তরী। আমি জানি আপনার কোনো দোষ নেই। “ 

তরী হঠাৎ হিংস্র হয়ে ফুসে উঠে। সে পার্থর থেকে সরে গিয়ে তার দুই হাত দ্বারা পার্থর বলিষ্ঠ বুকে ধাক্কা দেয়। পার্থ কিছুটা পিছনে সড়ে যেতেই তরী ফোস ফোস করে বলে উঠে, 

“ এসব আপনি করেছেন তাই না? আমার কারণে আপনার নিজের ইলেকশন প্রত্যাহার করতে হয়েছে। সেটার প্রতিশোধ নিচ্ছেন? “ 

পার্থ অবিশ্বাস্যকর সুরে প্রশ্ন করে, 

“ আমি কেন আপনার উপর প্রতিশোধ নিবো? “ 

“ কারণ আপনি ছাড়া আমার জীবনে আর কোনো কাল নেই। আপনি আমার জীবনের সবথেকে বড় কাল। এক ইলেকশনের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আপনি আমার থেকে আমার অস্তিত্বের একটা অংশ কেড়ে নিয়েছেন। আমার কষ্ট করে উপার্জিত পরিচয় ছিনিয়ে নিয়ে কেমন অনুভব করছেন? “ 

পার্থ গরম চোখে তাকিয়ে বলে, 

“ মুখে লাগাম টানুন। “ 

তরী রেগে পার্থর দিকে ঝুকে তার কলার টেনে বলে, 

“ আপনি নিজের কর্মকান্ডে লাগাম টানুন। আর কতো মানুষের জীবন নষ্ট করবেন? “ 

পার্থর এইবার রাগ উঠে। সে তরীর দুই বাহু চেপে ধরে বলে উঠে, 

“ আমি এক মুহুর্তের জন্যও আপনার কোনো ধরনের ক্ষতি করার কথা চিন্তা করি নি। “ 

“ আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করে আমার সবথেকে বড় ক্ষতি করেও বলছেন আমার ক্ষতি করার চিন্তা করেন নি? “ 

পার্থ এই পর্যায়ে এসে দমে যায়। তরী ভুল তো আর বলে নি। সত্যিই তো সে তাকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছে। তরী ক্লান্ত ভঙ্গিতে আবারও দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে। দুই হাঁটু ভাজ করে বুকের কাছে এনে তাতে মুখ গুজে রয়। পার্থ নীরবে তরীর পাশে এসে দেয়ালের সাথে মাথা হেলান দিয়ে বসে। 

রাত গভীর হয়। পার্থ একই ভঙ্গিতে বসে রয়। আচমকা নিজের কাধে মৃদু ভার অনুভব করে। ঘাড় ঘুরিয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে তরী তার কাধে হেলান দিয়ে ঘুমোচ্ছে। তার তপ্ত নিঃশ্বাস এবার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু পার্থর পাঞ্জাবির কাপড় ভেদ করে তার চামড়া স্পর্শ করে। পার্থ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবার দেয়ালে নিজের মাথা ঠেকায়। ক্লান্ত স্বরে বলে উঠে, 

“ আপনাকে কোনো অবস্থাতেই আমি ডিভোর্স দিবো না তরী। কিন্তু আপনার এলোমেলো জীবন সাজিয়ে দেওয়ার কথা দিচ্ছি। কথার বরখেলাপ হলে নিজেকে আপনার হাতে তুলে দিবো। ব্যর্থ আসামীকে নাহয় তখন সাজা শুনিয়েন। “

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যেই তোমার হাওয়া আমাকে ছুঁলো | পর্ব - ২১ | ভালোবাসার গল্প | উপন্যাস এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি