আমাদের চ্যানেলে ঘুরে আসবেন SUBSCRIBE

আদুরি পাখি ওয়েবসাইটে আপনাকে স্বাগতম™

সম্মানিত ভিজিটর আসসালামুয়ালাইকুম : আমাদের এই ওয়েবসাইটে ভালোবাসার গল্প, কবিতা, মনের অব্যক্ত কথা সহ শিক্ষনীয় গল্প ইসলামিক গল্প সহ PDF বই পাবেন ইত্যাদি ।

  সর্বশেষ আপডেট দেখুন →

ভালোবাসার গল্প | অবরুদ্ধ নিশীথ | পর্ব - ০৬

Please wait 0 seconds...
Scroll Down and click on Go to Link for destination
Congrats! Link is Generated

 #অবরুদ্ধ_নিশীথ

#তেজস্মিতা_মুর্তজা

৬.

অন্তূদের বাড়ির দু'পাশে পুকুর। কচুরি পানা ভরা। পুকুরটা মেজো চাচা আফজাল আর ছোটো চাচা আফতাবের। মেজো চাচা কুড়িগ্রাম অন্তূর দাদার আসল পৈতৃক বাড়িতে থাকেন আর ছোটো চাচা চুকরির সুবাদে ঢাকা থাকেন। 

আছরের নামার আদায় করে বারান্দায় এসে বসাটা ওর অভ্যাস। প্রতিদিন এ সময় কচুরিপানার স্তূপের ওপর ডাহুক পাখরা হাটে। দেখতে ভালো লাগে। আজ দেখা যাচ্ছে না।


তরতর করে ঘুরে বেড়ায় ডাহুকগুলো। আগে অন্তিক এসে ফাঁদ পাতার পরিকল্পনা আটতো পাখিগুলো ধরার জন্য। মারামারি লেগে যেত অন্তূর সাথে। অন্তূর কথা–প্রাণি হত্যা মহাপাপ। আর প্রাণি যদি পাখি হয় তা শিকার করা ডাবল মহাপাপ। সে কোনোদিন অন্তিককে পাখি ধরতে দেয়নি।


আজ ভাবীর চাচাতো ভাইয়ের বাড়ি থেকে দেখতে আসার কথা ছিল। আসেনি। আমজাদ সাহেব দু'দিন পর আসতে বলেছেন। আঁখির কথা মনে পড়ল। আজ দু'দিন হলো খুব জানতে ইচ্ছে করে, জয় আগে ভার্সিটির মেয়েগুলোর সাথে কী করেছে? 


বিরক্ত হয়ে উঠল অন্তূ নিজের ভাবনার ওপর। ঘুরে ফিরেই এই ঘেচালে মন চলে যায়! বাড়িতে নীরব অশান্তি চলছে। সরকারী প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার ছিলেন আমজাদ সাহেব। দিনকাল চলেছে কোনোমতো। কিন্তু অন্তূ বড় হয়েছে, অন্তিক বড় হয়েছে, সেই অবস্থায় বাড়ি না করলে নয়। 


বাবা হিসেবে শিক্ষা ও সাধ্যমত যোগ্যতা ছাড়া বিশেষ কিছু দিতে পারেননি। অন্তিক যদিও বা জিদ ও ঝামেলা করতো, অন্তূ সেটুকুও করেনি কোনোদিন ছোটোবেলা থেকে 


আব্বু শখ করে কষ্ট করে কিছু দিতে চাইলে হাসিমুখে অভ্যাস –'লাগবেনা আব্বু, এই জিনিস আমার পছন্দ বা প্রয়োজন না।ʼ সেক্ষেত্রে বাপ হিসেবে আমজাদ সাহেবের কর্তব্য নয় কি সন্তানকে অন্তত একটা উপযুক্ত বাসস্থান দেয়া? শেষ পর্যন্ত এই তো বছর দুয়েক আগে ধার-দেনা করে, এবং কিছু গুছানো টাকা দিয়ে দোতলার কাঠামো তুললেন। একতলার ছাদ হতে হতে টাকার সংকট পড়ল। পুরোনো বাড়ি ভাঙার ফলে থাকার জায়গার সংকট হলো। সেই অবস্থায় বাড়ির একতলা অন্তত ঠিক করা ফরজ হয়ে দাঁড়াল। এতে আরও অনেকটা ঋণ হয়ে গেল। অন্তূ জানতো না আব্বু শেষ পর্যন্ত বাড়ির কাজ দ্রুত সারতে সুদসহ টাকা ধার নিয়েছেন। যার সুদ-আসল মিলে এখন জানের ওপর উঠেছে। 


অন্তূর দাদার বাড়ি কুড়িগ্রাম। তবে কোনো এক সূত্রে তিনি বেশ অনেকটা জমির মালিকানা পেয়েছিলেন এই দিনাজপুরেও। আমজাদ সাহেব এখানে বসতি গেঁড়েছেন


দেনার দায় থেকে মুক্ত হতে আমজাদ সাহেব কুড়িগ্রামের জায়গা বিক্রির বায়নামানার টাকা নিয়েছেন। এছাড়া আর উপায় ছিল না, পাওনাদারেরা ঘাঁড়ের ওপর উঠে আছে, সাথে দিন যত যাচ্ছে, সুদের পরিমাণ সমান্তরাল হারে বাড়ছে। বিপত্তি বেঁধেছে মেজো চাচাকে নিয়ে। ভদ্রলোক বিশাল খামারের মালিক। খামার আমজাদ সাহেবের জায়গার অর্ধেকটাতে চলে এসেছে। ক্রেতা লোকটা ততদিন রেজিস্ট্রিতে যাবেন না, যতদিন জমি পরিস্কার, ঝামেলামুক্ত না হয়। এটাই স্বাভাবিক, কোনো ক্রেতাই টাকা-পয়সা খরচা করে ভেজাল জমি কিনতে আসবেন না। 


মেজো চাচা আমজাদ সাহেবকে জমিই দিতে রাজী নন। তিনি বলেছেন, “আমজাদ এখানে থাকে না, জমির দেখভাল করে না, তাছাড়া ও তো দিনাজপুর একটা জমি পেয়ে সেখানে বাড়ি করে বসবাস করছে। তাহলে এখানে আবার কীসের জমি পাওনা? কোনো জমি পাবে না ও এখানে!ʼʼ

 

সেদিন যখন আমজাদ সাহেব গেলেন সেখানে, শালিস বিচার করে অবশেষে রায় এলো, খামার হবার পরেও আমজাদ সাহেবের জমির যে অর্ধেক খালি পড়ে আছে, সেটুকু তিনি পাবেন, বাকিটার আশা ছাড়তে হবে। তাতে যে অর্ধেক বাকি আছে, সেটুকু দিতে রাজী হয়েছেন আফজাল সাহেব। বাকি যেটুকুতে উনার খামার রয়েছে, সেটুকু উনি দেবেন না। এ নিয়ে বেশি ঝামেলা করলে বাকিটুকুও না দেবেন না। 


আমজাদ সাহেব কেবল দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। তার শুধু একটা কথা মাথায় এসেছে, "জোর যার, মুল্লুক তার।"


প্রতিদিন পাওনাদারেরা আসছে বাড়িতে। আব্বুর শুকনো মুখটা অন্তূর কলিজা ছিদ্র করে বিঁধছে। আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মানুষটা কেমন মিইয়ে যান পাওনাদারদের সম্মুখে। মেজো চাচার দাবী, আমজাদ যেহেতু এখানে থাকেনা, ওর এখানকার জমিতে কোনো অধিকার নেই। তিনি নেহাত ভালো মানুষ বলে অর্ধেকটা তাও দিচ্ছেন!


এসব শুনে অন্তূর রক্ত টগবগিয়েছে। নিম্ন মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার মান এমনই হয়–এসব বুঝিয়ে সান্ত্বণা দিয়েছে নিজেকে। 


জীবনটা জটিলতা আর ধ্বংস-ত্রাসে ভরপুর হয়ে উঠছে। সে এই জীবনে এমন পাপ তো করেনি, যার প্রতিদান সরূপ এত কঠোরতা প্রাপ্য! 


আম্মু চেঁচিয়ে ডাকছে। অন্তূ অতিরিক্ত অন্যমনষ্ক! বারবার ডেকে তার হুশ ফেরাতে হয়। আম্মুর কাছে গিয়ে বলল, “কী হয়েছে?ʼʼ


রাবেয়া বেগম রোদে কুমড়ো বড়ি শুকাতে দিয়েছিলেন। তা তুলছেন বসে। 


-“তোর বাপ ডাকতেছে, যা শুনে আয়। তোরে ছাড়া বেহুশ হয় ওই লোক, দূরে থাকিস ক্যান?ʼʼ


ঘরে ঢুকতেই সুরমা-আতর মিশ্রিত একটা সুগন্ধ এসে নাকে ঠেকল। আব্বু আছরের নামাজ শেষে জায়নামাজেই তসবীহ গুনছেন। অন্তূ এগিয়ে গিয়ে মেঝেতে বসতে অগ্রসর হয়। আমজাদ সাহেব বাঁধা দিলেন, “তুই বিছানায় বস। আমি এই বসাতেই মাগরিব পড়ে উঠব, আজ আর মসজিদে যাব না, শরীর খারাপ।ʼʼ


অন্তূ কথা শুনল না। আব্বু নিচে বসে থাকলে সে কীভাবে পা তুলে বা ঝুলিয়ে বিছানায় বসতে পারে? আব্বুর পাশে পা গুটিয়ে মেঝেতে বসে পড়ল। আমজাদ সাহেব কিছু বললেন না। অন্তূ জিজ্ঞেস করল, “শরীর ভালো তোমার?ʼʼ


-“আছে ভালোই। আলহামদুলিল্লাহ।ʼʼ


কী শুদ্ধতম চেহারা। এক থুতনি চাপ দাড়িতে হালকা পাক ধরেছে, মেহেদির রঙ উঁকি দিচ্ছে। গভীর চোখ, পুরু ঠোঁটের বিশালদেহী মানুষটা! ভারী, গম্ভীর কণ্ঠস্বর! এক পা গুটিয়ে বসেছেন, সেই পায়ের নখে কালো দাগ। অন্তূ তাতে হাত বুলিয়ে বলল, “কোথাও ব্যথা পেয়েছিলে? রক্ত জমেছে নাকি নখে?ʼʼ


আমজাদ সাহেব বললেন, “ব্যথা পাওয়ার কথা মনে পড়ছে না, তবে ওখানে একটু ব্যথা আছে।ʼʼ


অন্তূ আব্বুর নখে আঙুল বোলালো। 


-“বাড়িতে কী হয়েছে রে অন্তূ?ʼʼ


অন্তূ বাচ্চাদের মতো হাসল, “সব ঠিকঠাক। কী হবার কথা ভাবছো? প্রেশার হা হলে সুখ লাগে তোমার?ʼʼ


আমজাদ সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, “তুই আমার মা না, আমি তোর বাপ! হুঁশিয়ারী করছিস আমার সঙ্গে?ʼʼ


অন্তূ হেসে ফেলল আরও খানিকটা, “করতেই পারি। তুমি অল্ড জেনারেশনের লোক, তোমাকে ঘোল খাওয়ানো কোনো ব্যাপার নাকি আমার কাছে?ʼʼ


আমজাদ সাহেব বললেন, “বিয়ে-শাদি করবিনা তাই বলে?ʼʼ


অসহায় মুখে তাকাল অন্তূ, “তুমিও আব্বু? কাকে বিয়ে করব? ভাবীর আনা ছেলেকে, নাকি আম্মার কাছে আসা ঘটকের পাত্রদের মাঝে কাউকে?ʼʼ 


আমজাদ সাহেব কিছু বললেন না। অন্তূ আনমনে বলল, “আব্বু! সামনের দিনগুলো খুব খারাপ যাবে, তাই না?ʼʼ


আমজাদ সাহেব চোখ মেলে তাকালেন, “তোকে বলেছি কোনোকিছুকে পাত্তা দেয়া যাবেনা। জীবন একটা চক্র রে অন্তূ। সোজা ভাষায় বললে–বৃত্ত। কোনো এক বিন্দু থেকে একই রেখা বরাবর যতটা আগে এগোবি, রেখাতে চক্রাকারে ঘুরে সেই প্রথম বিন্দুটা ঠিক তত নিকটে আসতে থাকবে। ঠিক যেমন, রাত যতটা গভীর হয়, সকাল তত নিকটে আসে। কষ্টের যত গভীরে ঢুকবি, সুখ ঠিক ততটুকু কাছে আসবে। সুখের ক্ষেত্রেও তাই। সুখের মাঝে যতটা মজে যাবার সুযোগ পাওয়া যাবে, দুঃখকে ঠিক ততটা কাছে কল্পনা করে প্রস্তুত থাকতে হবে। কিছুই চিরস্থায়ী নয়, অন্তূ।ʼʼ


অন্তূ অভিভূতের মতো চেয়ে রয় আব্বুর দিকে। পঞ্চাশোর্ধ মানুষটা অন্তূকে প্রতিক্ষণে মুগ্ধ করতে তৎপর। চোখের শীতল, অভিজাত চাহনি, মুখের শুদ্ধতম গাম্ভীর্যতা! 


-“সুখ কী আব্বু?ʼʼ


আমজাদ সাহেব বললেন, “সুখ কেবল এক কল্পিত তত্ত্ব। দুঃখের সাপেক্ষে আপেক্ষিক বৈপরীত্বের কল্পিত তত্ত্বকে সুখ বলে। অর্থাৎ, শতভাগ দুঃখের মাঝ থেকে যতটুকু দুঃখ বিয়োগ হবে, ওই বিয়োগফলটাই সুখ। আর কেউ দুনিয়ায় শতভাগ দুঃখী নয়।ʼʼ


মাথা নত করে হাসে অন্তূ। তার সৌভাগ্য কি তার বাপ নয়?


“আব্বু মেজো কাকার সাথে ঝামেলায় না জড়িয়ে, আম্মুর বাপের বাড়ির জমিটা বিক্রি করে পাওনাদারদের দিতে পারতে না? জানা নেই কী হবে ওখানে? কাকা ভালো মানুষ না, উনি যেকোনো রকমের বিশ্রী তামাশা করতে দু'বার ভাববেন না। প্রতিদিন পাওনাদারের এই ঘুরাঘুরি আমার চোখে লাগছে খুব!ʼʼ


আমজাদ সাহেব স্মিত হাসলেন, “আমার লাগছে না?ʼʼ


অন্তূ সপ্রতিভ স্বরে বলল, “আমার চেয়ে বেশি লাগছে, আর সেটাই পীড়া দিচ্ছে আমাকে। তুমি কেন সহ্য করছো এসব? আম্মুর দত্তরের জমিটা ..


আমজাদ সাহেব ডেকে উঠলেন, “অন্তূ! তোর মাকে যেদিন বিয়ে করে আমার ঘরে নিয়ে এসেছিলাম, সেদিন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিলাম, তোর মায়ের বাকি জীবনের সমস্ত ভার আমি বইবো। তার খাবার, কাপড়, থাকার জায়গা, চিকিৎসা–সবের দায়িত্ব আমার না? তাহলে সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি ঋণ করি, সেই ঋণ পরিশোধের দায় কার? তার বাপের বাড়ি থেকে সে কী পেয়েছে না পেয়েছে সেটা দেখার আমি কে? কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা? যতদিন বেঁচে আছি অন্তত ততদিন তো না। এমনকি মরার পরেও তার একটা ব্যবস্থা করে যাওয়া আমার কর্তব্য! তা পারব কি-না জানা নেই। তাহলে তার ভরনপোষনে খরচা করা টাকার ঋণ তার বাপের কাছে পাওয়া জমির পয়সায় কী করে পরিশোধ করি? এমনিতেই তাকে জীবনে ভালো তো রাখতে পারিনি আমি। এমন কিছু রেখেও যেতে পারব না, যা দিয়ে আমার অবর্তমানে তার খুব চলবে। তখন ঠিক ওই জায়গা বিক্রি করেই চলতে হবে হয়ত তাকে। এটা আমার কর্তব্যে খেলাপি না? মরার পরেও কর্তব্যের হেরফের হবে, বেঁচে থাকতেও যদি তাই করি..ʼʼ


আমজাদ সাহেব একটু থেমে আবার বললেন, “আমি তোর মায়ের কাছে এমনিতেও ঋণী, খুব ভার এই ঋণের। আমার ছেলের ওপর সেই শখ আমি রাখতে পারিনা, যে সে তার মা আর তোকে দেখবে।ʼʼ


অন্তূ হাসল। ছেলের ওপর ন্যায্য ভরসা রাখাকে শখ বলছেন এই লোক! মানুষটা ব্যাপক-অদ্ভুত-আত্মসম্মানী। 


-“আগামীদিন বিচার আছে। আশা রাখা যায়, ভালো কিছুই হবে। গ্রামের মাতব্বররা আবার শালিস ডেকেছে। জমি পেয়ে যাব, বিক্রি হয়ে যাবে। পাওনাদার আর আসবে না, তুই চিন্তা করিস না।ʼʼ


আর কথা বাড়ায় না অন্তূ, ভাবনায় ডুবে যায়। রাবেয়ার ভাগ্য, নাকি কোনো নেকির ফল? মূর্খ-সরল, সহজ নারীটা হুটহাট তার আব্বুকে কোন কপালে পেয়ে গিয়েছিল? কী করলে এমন কাউকে এই শেষ বেলায় এমন শক্তিমান ছায়ার মতো পাওয়া যায়? হুট করে অন্তূর ভেতরে অদম্য এক শখ অথবা আকাঙ্ক্ষা জাগল—তার জীবনে এমন কেউ কি আসতে পারে না? ভাবী জিজ্ঞেস করে, তোমার কেমন সঙ্গী চাই? ভাবী বা আম্মা বোঝেনা, তার একজন এমন কর্তব্যপরায়ন পুরুষ চাই, যে একরাশ প্রশান্তি এবং এক বুক আত্মমর্যাদার চাদরে মুড়ানো, এক মুঠো নিঃস্ব সুখ হবে। সম্পদ ছাড়া তার কাছে সব থাকবে। একটু অবাক হলো নিজের ভাবনায়, সম্পদ ছাড়া? উত্তর এলো, হ্যাঁ! সম্পদ ছাড়া যে পুরুষেরা কর্তব্যপরায়ন, তারা স্বর্গীয়। এই তো আব্বু! সংকটেও যে এমন সব কাব্যিক কর্তব্যের বর্ণনা দেয় নিজের অর্ধাঙ্গীনিকে নিয়ে মেয়ের কাছে!


মাগরিবের আজান হলো।  রাবেয়া ঘরে ঢুকলেন। আমজাদ সাহেব জায়নামাজের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে হাত বেঁধেছেন। রাবেয়া এসে পাশে দাঁড়াল। অন্তূ এই সুখময় সুযোগ ছাড়তে চাইল না। আব্বুর বাথরুমে অযু করে এলো। আজ সে এই দুই অদ্ভুত সঙ্গীদের মাঝে দাঁড়িয়ে মালিকের সামনে মাথা নোয়াবে। 


আম্মু আব্বুর তুলনায় বেশ খাটো। লম্বা, চওড়া, অভিজাত নব্বই দশকের নায়কদের মতো আব্বুর পাশে আম্মুকে কি বেমানান লাগছে? আবার হাসল অন্তূ! উহু! এই দুজনকে বেমানান লাগতে পারেনা, এরা রবের সৃষ্ট জুটিদের মাঝে একজোড়া। দুজনে পাশাপাশি দাঁড়িয়েছে রবের সম্মুখে ঝুঁকতে। কাধে কাধ মেলেনি উচ্চতায়, অথচ মনের মিল অসীম! অন্তূ সব ভুলে বুক ফুলিয়ে একটা ফুরফুরে শ্বাস ফেলে আব্বুর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। আব্বু নীরবে তার জন্য নিজের একপাশে পাশটায় জায়গা রেখে নামাজে দাঁড়িয়েছে। অপর পাশে রাবেয়া বেগম।


ইলেকশন এগিয়ে আসছে। প্রতীক বের হবে দিন দুয়েকের মাঝে। গতকাল সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। ব্যস্ত সময় কাটছে হামজার, জয়ের দৌঁড়াদৌঁড়ি বেড়েছে। 


সকাল দশটা। বাড়ির মেয়েরা রান্না শেষ করল, পুরুষগুলো জাগেনি তখনও। শাহানা বললেন, “এই যাও তো রিমি, দেখো তোমার শশুর উঠলো নাকি?ʼʼ


রিমি দুটো নোংরা প্লেট সিংকে রেখে বলল, “শশুরআব্বা এমনিতেও এখন উঠবে না, আম্মা! আমি উনাকে ডেকে আসি, সকাল সকাল ডাকতে বলেছিল, দশটা বেজে গেছে।ʼʼ

রিমি বের হবার সময় তরু ঢুকল রান্নাঘরে। শাহানা তরুকে জিজ্ঞেস করলেন, “জয় উঠছে?ʼʼ


তরু মাথা নেড়ে 'নাʼ জানিয়ে ভাতের গামলাটা নিয়ে ডাইনিং টেবিলের দিকে গেল। 


রিমি রুমে ঢুকে জানালার পর্দা ঠেলে কাঁচ সরিয়ে দিলো। হামজা উপুড় হয়ে শুয়েছিল। মুখ কুঁচকে নড়েচড়ে উঠল, “উমমহ! কী করছো, রিমি! পর্দা টেনে দাও!ʼʼ


ঘুম জড়ানো পুরুষের কণ্ঠস্বর এতোটা মোহনীয় হয়! তা কি জানে এরা? নিজের মনেই আওড়ালো রিমি। তার চেয়ে বয়সের পার্থক্য একটু বেশিই লোকটার। অথচ রিমির লোকটাকে একটুও ভয় করেনা, সংকোচ হয়না, খারাপ লাগেনা। দাড়ি-গোফ বেড়েছে লোকটার। নিজের যত্নে গাফলতি করছে ব্যস্ততায়। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরনে শুয়ে থাকা এই লোককে তার পার্টির ছেলেরা এভাবে দেখলে কি নেতা মানবে? ছোটো যুবকের মতো লাগছে। 


-“নেতাবাবু! আপনার নির্বাচন তো ফুরিয়ে গেল! উঠুন জলদি, আমার আর মেয়রের বউ হওয়া হলো না!ʼʼ


চোখ খুলে তাকাল হামজা। চোখের কোণে লালচে হয়ে আছে। 


-“তুমি খুব ক্ষমতালোভী, বউ! আমার লোভ নেই তোমার, আছে আমার নেতাগিরির লোভ! আর এর ফলে আমার হাতে তোমার গর্দান যেতে পারে যেকোনো সময়!ʼʼ


রিমি বসল হামজার উরুর ওপর। অহংকারী ভঙ্গিতে গলা জড়িয়ে ধরল হামজার, এরপর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে বলল, “ঠিক ধরেছেন। ক্ষমতাহীন পুরুষ আমার কাছে মৃত খরগোশের সমান। বাপ-ভাইদের দাপট করে বেড়াতে দেখে বড়ো হয়েছি আমি। পৌরসভার সাবেক মেয়রের ভাইয়ের মেয়ে আমি, আব্বু উপজেলা চেয়ারম্যান। তাদের এক কথায় জেলা কাঁপতে দেখেছি। বউ হয়ে এলাম যার ঘরে, তার কথায় যদি এরিয়া না কাঁপে, ভেতরটা সন্তুষ্ট হবে কী দিয়ে! যখন এসেছি আপনার হয়ে, তখন আপনি কেবল ছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ধীরে ধীরে আপনার উন্নতি দেখব, সাথে আমার পদবীরও, এই আশায়ই তো প্রতিটা বেলা গুণছি। নয়ত সেদিন আপনিই কেন? কারণ, সম্ভাবনা আছে আপনার মাঝে। আব্বুর বয়স যাচ্ছে, চাচা রিটায়ার নিয়েছে নিজে থেকেই। কার ক্ষমতায় বুক ফুলাবো আমি? আপনার, নেতাবাবু!ʼʼ


-“তোমাকে সব সময় শাড়ি পরতে বলেছি না?ʼʼ


রিমি উঠে দাঁড়িয়ে বিছানা থেকে হামজার টিশার্ট কুড়িয়ে নিলো। হামজা বলল, “আমার একটা পাঞ্জাবী বের করে দাও, তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। জয় উঠেছে নাকি?ʼʼ


জয় কোনোসময় ঘরের দরজা আটকে ঘুমায় না। রাতে তার টাল হয়ে পড়ে থাকার অভ্যাস আছে যেহেতু, ওই অবস্থায় কবীর বা লিমন ওকে ধরে কোনোমতো রুমের সামনে পৌঁছে দিয়ে চলে যায়। হামজার চোখে পড়া পড়া যাবেনা। 


তরু রুমে ঢুকল। রুমটা অন্ধকার হয়ে আছে। না ডেকে আগেই আলো জ্বালালে এক্ষুনি উঠে থাপ্পড় মারতে পারে একটা। লুঙ্গি পরনে, আর শার্টটা পড়ে আছে দরজার ডানপাশে ঝুরির ওপর, সেখানে ঝুলছে সেটা। হাতঘড়ি এখনও হাতেই। ওয়ালেট নিশ্চয়ই পকেটে!


তরু বিছানার পাশে গিয়ে ঝুঁকে বসল। আলগোছে হাতঘড়িটা খুলল, পকেট থেকে ওয়ালেট বের করল। নাকে দুর্গন্ধ এসে ঠেকছে জয়ের মুখ থেকে। পুরো ঘরেও একটা ভ্যাপসা গন্ধ ছড়িয়েছে। উঠে দাঁড়িয়ে বোতল খুঁজল, পেল বেড সাইড টেবিলের একপাশে, বাঁকা হয়ে পড়ে আছে।  


-“জয় ভাইয়া! শুনছেন? সকাল হয়েছে, ডাকছে আপনাকে হামজা ভাই! জয়!ʼʼ


জয় চোখ বুজেই উঠে বসল, “এককাপ কড়া করে চা বা ব্লাক কফি আন। শালার হ্যাংঅভার কাটছেই না।ʼʼ


জয় তরুকে কী চোখে দেখে, জানা নেই তরুর। সব সময় আদেশ, ধমক, ভয়ের ওপর রাখে। জয়ের আচরণ খিটখিটে। তরু বেশ ছোটো জয়ের। হামজার খালার মেয়ে তরু। জয় সে হিসেবে তরুর খালার ননদের ছেলে। 


জয়ের যে দায়িত্বশীল একটা লুকানো আচরণ প্রকাশ পায় তরুর ওপর, সেটা তরু দেখেছে খালি। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘুরে আসার সময় তরুর জন্য যা চোখে লাগে কিনে আনে, ডেকে হাতে দেয়। মন খারাপ থাকলে কাছে ডাকলে ধমকে জিজ্ঞেস করে, “মুখ থুবরে আছিস কেন? জামাই মরছে?ʼʼ 


এবার ঢাকা থেকে ফেরার পথে দুটো তাতের শাড়ি এনেছিল সাথে করে। একটা রিমিকে দিয়েছে, আরেকটা তরুর। তরুর ঝুমকো দুল খুব পছন্দের। সাথে দু-জোড়া কালচে রঙা দুলও ছিল। 


মাথা ব্যথা করলে মাথা টিপে দেয়া থেকে শুরু করে মাঝেমধ্যেই অসুস্থ জয়ের পাশে সারারাত জেগে সেবা করার দায়িত্বটুকুও তার। কোনোদিন ভুল করে বসেনি জয়। ভুল হবার আগেই ছিটকে সরিয়ে দিয়েছে তরুকে। অসুখের ঘোরেই কখনও কখনও রুম ছেড়ে বের হয়ে গিয়েছে হোটেলে নিজেকে শান্ত করতে। তরু জানে না, নিজের শারীরিক চাহিদার খাতিরে জয় তাকে কাছে টানলে সে জয়কে ঠেলতে পারতো কিনা! ভাবলেই একটা শিহরণ ছড়িয়ে যায় দেহ-মনে।


জয় ব্রাশে টুথপেস্ট লাগিয়ে ফোন টিপতে টিপতে তুলির রুমে ঢুকল। বালিশে হেলান দিয়ে পা টান করে বসে আছে তুলি। জয়কে দেখেও দেখল না। বিছানায় বসে কম্বলটা ফেলে দিলো মেঝেতে। না ফেলেই দিব্যি বসা যেত। 


-“রাতে খেয়েছিস?ʼʼ


-“তা জেনে তোর কী? এখন যা, কথা বলতে ইচ্ছে করছে নাʼʼ


তুলির গম্ভীর চেহারা।


-“কী আশ্চর্য আশা তোর! তুই বললি আর জয় তা মেনে চলে গেল! ইচ্ছে থাকলেও যাব না, কারণ তুই যাইতে বলতেছিস।ʼʼ


-“এখন ত্যাড়ামি না করে যা তো জয় রুম থেকে। ভালো লাগছে না।ʼʼ


-“আর তো কারও ভাতারের সাথে ঝামেলা হয় না, রাইট! তোর মতোন এমনে ড্যাং ড্যাং করে বাপের বাড়ি এসে ছ্যাঁচড়ার মতো পড়ে থাকে না তারা!ʼʼ


বিছানার ওপর থেকে একটা কুশন তুলে ছুঁড়ে মারল তুলি, “আমার বাপের বাড়ি আমি এসেছি, তোর কী? তুইও তো বাপের সম্পত্তি ফেলে এসে মামার বাড়ি পড়ে আছিস ছ্যাঁচড়ার মতো!ʼʼ

 

-হাসল জয়, “আমি কি তোর মতো স্বামীর সাথে কামড়াকামড়ি করে অসহায় হয়ে এসে উঠছি? বাপের অগাধ সম্পত্তি পড়ে আছে, তার পরেও তোর বাপের এই ছোটোলোক মার্কা ভএঙরি বাড়িতে এসে পড়ে আছি। তোমাদ বাপ মা এমনি পীর ভুজে ক্যান, সিস্টার? আমি মরলে কৌন বানেগা কোরপতি?ʼʼ


-“একটা লাত্থি মারি তোর ঘাঁড়ের ওপর, তার আগে বের হ আমার রুম থেকে। মন মেজাজ ভালো নেই এমনিই।ʼʼ


-“তোর রুম? এটা তোর রুম কেমনে! সেই কবেই তো তোরে কাল্টি করছে, মামা!ʼʼ


তুলি করুণ দৃষ্টিতে তাকাল জয়ের দিকে, “আমার ভালো লাগছে না, জয়!ʼʼ


-“তো আমি কী করব?ʼʼ


ক্ষণকাল বাদে তুলির কণ্ঠস্বর কাঁপল, “আমার মেয়েকে কোল থেকে কেড়ে রেখে বলে, তুই যেখানে যাবি যা, মারা খা গিয়ে। আমার মেয়ে যাবে না তোর মতো খা*** সাথে। আমি সেই বাড়িতে কীভাবে আবার যাব, জয়!ʼʼ


জয়ের অভিব্যক্তির পরিবর্তন হলো না। এদিক-ওদিক তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “মামাকে বলেছিস?ʼʼ


-“আব্বুকে কী বলব? আরও চিন্তা করবে। সামনে ইলেকশন। এখন আমার ঝামেলা কী করে চাপাই তার ওপর?ʼʼ


-“সাহেব জানে?ʼʼ


-“হামজা ভাই? অল্প জানে।ʼʼ


-“কী চাইতেছিস তুই এখন?ʼʼ


মাথা নিচু করল তুলি, “আমি কী চাইব? আমার ছোট্ট মেয়েটাকে দেখি না কতদিন হলো। কীভাবে আছে কিচ্ছু জানি না..ʼʼ কান্নায় ভেঙে পড়ল তুলি। 


জয় বিরক্ত হয়ে ধমক উঠল, “এই থামা! প্যানপ্যান না করে ক কাহিনি কী? সকাল সকাল তোর ক্যাউ ক্যাউ শুনতে আসি নাই ঘুম কামাই করে।ʼʼ


তুলি সুন্দরী। শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালশিটে দাগ বোঝা যাচ্ছে, দেহের রঙ ফর্সা হবার ফলে আরও বেশি বোঝা যাচ্ছে। ফর্সা মুখের ওপর চোখের নিচের কালি খুব চোখে বিঁধছে। 


জয় গম্ভীর হলো, “কী হয়েছে?ʼʼ


কিছুক্ষণ সময় নিলো তুলি। কাঁদছে না ও। জয় তার দুঃখ শুনে সমবেদনা জানাবে না, না সান্ত্বণা দেবে, নরম সুরে আদুরে কণ্ঠে বোঝাবে না। তবু সকল দুঃখ শোনার দাবিদার সে! বাসি পেটে ঘরের মধ্যে সিগারেট জ্বালিয়ে মন ভরে টানছে, আর হাঁটু দোলাচ্ছে। 


তুলি অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলল, যা এখান থেকে।


-“সীমান্তর নম্বরটা দে।ʼʼ


-“না! দরকার নেই। আমি কথা বলে নেব, তুই শান্ত হ। মিটিয়ে নেব আমি। আচ্ছা আর কাঁদছি না। জয়..ʼʼ


জয় তাকাল তুলির দিকে। এখন ঠাটিয়ে দুটো চড় মারতে দ্বিধাবোধ করবে না জয়। সেই সভ্যতা বা আদব নেই ওর মাঝে। হোক বড়ো বা ছোটো, হাত উঠে যায় খুব সহজে। তুলি নম্বর বলল। ফোনে তুলল নম্বরটা জয়। উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “খেতে আয়।ʼʼ


-“আমার এখন খিদে পায়নি। পরে খেয়ে নেব, তুই খেয়ে বের হ।ʼʼ


জয় বের হয়ে যেতে যেতে বলল, “দ্বিতীয়বার আর কেউ ডাকতে আসবে না, আর না আমি রিপিট করব। ব্রাশ করে এসে যেন টেবিলে পাই তোকে।ʼʼ


হামজা আর জয় বাড়ি থেকে বের হলো দুপুর বারোটার দিকে। কবীর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মোড়ের ওপর। এই পথটুকু হেঁটে যেতে হবে। রাস্তার হাঁটার সময় এক মহিলা এগিয়ে এলো ওদের দিকে। দুজনে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কেমন আছেন, চাচি?ʼʼ


চাচি বললেন, “ভালা আছি, বাপ। তোমার আব্বায় যে কইছিল একখান বিধবাভাতার কাড কইরা দিবো। সগ্গলে পাইছে, আমি খালি পাই নাই।ʼʼ


জয়ের দিকে তাকাল হামজা। জয় রোদচশমাটা খুলে বলল, “আপনি কাল সকালে আসবেন আমাদের বাড়িতে। ওগুলো আমার কাছে দিয়েছে হামজা ভাই, আমি দিয়েছি সকলকে, কয়েকজনেরটা রয়ে গেছে, ওর মধ্যে আপনারটাও আছে।ʼʼ


মহিলা সন্তুষ্ট মনে চলে গেলেন। এগোতে এগোতে ছোটো দুটো ছেলে সালাম হাত কপালে ঠেকিয়ে সালাম ঠুকল দুজনকে। এলাকার ফার্মেসির দোকানদার হামজাকে ডেকে বলল, “এই রাস্তায় তো আর হাঁটা যায় না, বাজান। একটু বৃষ্টি হইলেই কাদাপানি প্যাক-প্যাক করে। রাস্তার কাজ কবে ধরবা, হামজা!ʼʼ


হামজা হাসল, “এই তো, কাকা! নির্বাচনের ঝামেলাটা মিটলে আর কষ্ট করতে হবে না আপনাদের। রাস্তার কাজ এই রাস্তা দিয়েই শুরু করব, ইনশা-আল্লাহ! এলাকার মানুষ আগে আমার। আর এমনিতেও শীত নামানোর বৃষ্টি এসব, শীত এসে গেছে অলরেডি। এখন আর বৃষ্টি বা কাদা হবে না কয়েকমাস।ʼʼ


গাড়িতে উঠে বসল দুজন। হামজা সামনের সিটে উঠতে গেলে জয় এসে হানা দিলো, “তুমি পেছনে যাও, আমি এখানে বসব।ʼʼ


হামজা বিরক্ত হয়ে বলল, “আমাকে বিরক্ত করতে জন্মেছিস তুই এই জনমটা। তুই বড়ো হবি না এ জীবনে?ʼʼ


-“চান্স নাই, ব্রো। কথা না বলে পেছনে যাও তো! রোদে গা পুড়তেছে আমার।ʼʼ


গাড়ি চলছে মেইনরোড ঘেঁষে। হামজা জিজ্ঞেস করল, “সেদিন তোদের গাড়ির কী হয়েছিল শুনলাম!ʼʼ


জয় গম্ভীর হলো, “কার জানি চুলকানি উঠছে মনেহয় আমায় নিয়ে। একটু মলম লাগানো দরকার, তবে তার আগে হারামির বাচ্চাটার ঘা খুঁজে পাওয়া দরকার!ʼʼ


হামজা গাড়ির কাঁচ টেনে দিয়ে বলল, “বাবাকে আবার ডেকেছিল থানায়। এরপর থানায় ডাকা হলে, তুই সঙ্গে যাবি।ʼʼ


মাথা ঝাঁকাল জয়, “অসম্ভব। ওই পুলিশ শালাদের একেকটা মশার কয়েল টাইপ প্রশ্নে আমার মাথা সাড়ে পাঁচশো ডিগ্রি সেন্ট্রিগেড গরম হয়। হাঙ্গামা হবে আমি গেলে।ʼʼ 


হামজা মুখ শক্ত করল, “শুয়োরের বাচ্চা। মাইর খাবি। বলি, সবসময় ঠান্ডা মাথা নিয়ে চলবি, রাজনীতি একটা কৌশলগত চক্র। সেখানে তোর এই অভার-টেমপার মাথার জন্য জীবনে তোর উন্নতি হবে না, সাথে আমি তো রোজ ডুবছিই।ʼʼ


-“আমার..ʼʼ থেমে গিয়ে দাঁত খিঁচল, “আমার সামনে আমার বদনাম করতেছ তুমি?ʼʼ


হামজা চট করে হেসে ফেলল, “আমি তোর পেছনে!ʼʼ


কবীর হেসে উঠল। সিটে মাথা ঠেকাল জয়, চোখ বুজে জিজ্ঞেস করল, “গন্তব্য কোথায়, সাহেব?ʼʼ


-“মেয়র সাহেবের বাড়ি যাচ্ছি।ʼʼ


জয় দেহটা এলিয়ে দিলো সিটে। মাড়ির দাঁতের আগায় জিহ্বা ঘুরিয়ে হেসে মাথা ফেরালো পেছনে, “ছেলে বড়ো হয়েছে, ভাই! রাত হলেই ক্ষুধা লেগে যায় শরীরে। তোমরা একটা ব্যবস্থা করছো না..ʼʼ


কবীর জিহ্বা কামড়ালো, “লজ্জা শরম কোন হকারের কাছে বেঁচে বাদাম খাইছেন, ভাই? আপনার কী ব্যবস্থা করবে, হামজা ভাই? বারো থালায় খাওয়া লোককে একটা বিয়ে দিলে পোষাবে? বিয়ে করবি তুমি?ʼʼ


-“উহু! লাইফটাকে এখনও চেস করার আছে। এতো সকালে বলি হওয়া ঠিক না।ʼʼ


হামজা সিগারেট ধরালো, “তুই আসলেই মেয়েবাজী শুরু করেছিস, জয়? আমার বিশ্বাস হয় না।ʼʼ


কবীর হো হো করে হাসল হামজার নাটকে। খপ করে হামজার ঠোঁটের ভাঁজ থেকে সিগারেটটা কেঁড়ে নিজের ঠোঁটের গুজে অস্পষ্ট স্বরে বলল, “গুজব ওসব। আমি একজন ভালো লোক!ʼʼ


-“তরুর ব্যাপারে ভেবেছিস কখনও?ʼʼ


হুট করে গাড়ির কাচ তুলে এসি অন করে দিলো জয়। হামজা তৎক্ষনাৎ একটা থাবরা মারল জয়ের কাধে, “মারার আরও বহু প্লান আছে, এভাবে মারলে পাপ বেশি হবে তোর..ʼʼ কেশে উঠল হালকা।


জয় বলল, “তাই বলে তরুর দিকে নজর গেল তোমার?ʼʼ


-“তুই আগে জানালার কাঁচ নামা। শ্বাস আটকে মরে যাব, ধোঁয়া জমে গেছে ভেতরে, ঠান্ডাও লাগছে।ʼʼ


সিটে মাথা এলিয়ে দিলো জয়, “মরলে লাভ সবচেয়ে বেশি আমার, এবার মেয়র পদ আমার, কনফার্ম! তোমার পাশের জানালা খোলো, বাল!ʼʼ কবীরকে বলল, “এসি অফ কর।ʼʼ


কবীর আচমকা ব্রেক কষল। জয় নেমে দাঁড়াল। লম্বা শরীরে সাদা লুঙ্গি জয়ের। হামজা নেমে শাল চাদরটা গায়ে পেচিয়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সৈয়দ মুস্তাকিন মহান দাঁড়িয়ে আছে পকেটে হাত গুজে। 


চলবে..

আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভালোবাসার গল্প | অবরুদ্ধ নিশীথ | পর্ব - ০৬ এই পোস্ট টি পড়ার জন্য। আপনাদের পছন্দের সব কিছু পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন।

Post a Comment

Cookie Consent
We serve cookies on this site to analyze traffic, remember your preferences, and optimize your experience.
Oops!
It seems there is something wrong with your internet connection. Please connect to the internet and start browsing again.
AdBlock Detected!
We have detected that you are using adblocking plugin in your browser.
The revenue we earn by the advertisements is used to manage this website, we request you to whitelist our website in your adblocking plugin.
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.
A+
A-
দুঃখিত লেখা কপি করার অনুমতি নাই😔, শুধুমাত্র শেয়ার করতে পারবেন 🥰 ধন্যবাদান্তে- আদুরি পাখি